রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হামলা চালিয়েছে এমপি ছেলুনের বাহিনী

দিলীপ কুমার আগারওয়ালার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা ::

দৈনিক প্রভাতী

প্রকাশিত : ১২:০৫ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৩ সোমবার

দিলীপ কুমার আগারওয়ালার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

দিলীপ কুমার আগারওয়ালার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষকলীগের সভাপতির অফিসে হামলা-ভাংচুর, আলমডাঙ্গা উপজেলার একটি ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ নয় নেতার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর এ হামলার ঘটনা ঘটে। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, পিপিএম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আমরা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে কাজ করছি। তিনি চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় আমাদের বাড়ি, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের বাড়ির সামনে জেলা কৃষকলীগের অফিসের ১৫-২০টা চেয়ার ভাংচুর ও মোমিনপুর  ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়ন কবিরের বাড়ির মেইন গেট ভাংচুর করা হয়। এছাড়া সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মহাসিনের ওষুধের দোকান, আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু, ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জয়, একই ইউনিয়নের যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাইদ ও বাইতুল, সিরাজুল ইসলাম, একই উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহাদাৎ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায় তারা।

জেলা কৃষকলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার বলেন, আজ মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই আমার জেলা কৃষকলীগের অফিসের চেয়ারগুলো কোপানো ও ভাংচুর করা করেছে। সেই সাথে মোমিনপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি হুমায়নের বাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে এবং গালিগালাজ করেছে। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দেন মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আব্দুল্লাহ আল মামুন (রতন)। যারা এটা করেছে তারা নব্য আওয়ামীলীগ।  ভাংচুরের কারণ হিসেবে তারা আমাকে জানাই, দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে কাজ করেছি বলে এঘটনা ঘটিয়েছে তারা।

ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু বলেন, আমি একজন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে কাজ করায় আমিসহ আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েক জনের বাড়ি ও বাড়ির মেইন গেটে ভাংচুর করে মনোনয়ন পাওয়া সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের কর্মীরা। এঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শক করেছে।


মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মনোনয়ন পাওয়ায় সন্ধ্যার পর আমরা আনন্দ মিছিল করে চলে এসেছি। কে বা কারা এঘটনা ঘটিয়েছে আমরা জানিনা। তারা নিজেরাই এসব ঘটিয়ে আমাদের উপর দোষারোপ করছে। এমন নোংরা রাজনীতি আমরা করিনা।

এবিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২ আসনের নৌকার মাঝিদের জন্য অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইলো। আমি সব সময় বলে এসেছি, নৌকা যার, আমরা তার। আমাদের নেতাকর্মীরাও নৌকার ভোট করবে। চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি জানি। তাই তাদের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। আমি আমার নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। 

তিনি আরও বলেন, তবে দু:খজনক বিষয় চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে যিনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন, তার নেতাকর্মীরা কোনো কারণ ছাড়াই আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, বাড়ি-ঘরে ভাংচুর করছে। এতে আমার বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এরমধ্যে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। 

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, আমি তো আমার নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষেই কাজ করাবো। তারপরও নৌকা প্রতীক যিনি পেয়েছেন, তার নেতাকর্মীরা কেন এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে? তাহলে কী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি তাদের আস্থা নেই। তাই যারা অতি উৎসাহী হয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন, এবং আমার সমর্থক ও নেতা-কর্মীর বাড়িতে হামলা করছেন, তারা আওয়ামী লীগের শত্রু। আমার নেতাকর্মীরাও তো আওয়ামী লীগ করে এবং পদ-পদবীধারী, তারপরও কেন এমন ঘটনা? 

যাহোক আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রশাসনকে আরও তৎপর থাকার অনুরোধ করছি। যদিও পুলিশ প্রতিটি ঘটনাস্থলেই পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, তার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করবো হামলা-ভাংচুর যারা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, পিপিএম বলেন, চুয়াডাঙ্গা সদরের মোমিনপুরের আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের সামনে ৪-৫টা চেয়ার ভাংচুর করেছে এবং আরেকজনের বাড়ির টিনের বেড়ায় দুই তিনটা বাড়ি দেওয়ায় ভেঙ্গে গেছে এটা সত্য। আলমডাঙ্গাতে আনন্দ মিছিলের সময় গালিগালাজ ও   ঢিল ছুড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে।

কারা এঘটনা ঘটিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের অপর গ্রুপ (মনোনয়ন পেয়েছে) তারাই করেছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র‍্যাব আছে। ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।