চায়ের দোকানে কাজ করেও ‘সফল কন্টেন্ট ক্রিয়েটর’
প্রকাশিত : ০৫:২০ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২২ শনিবার
চায়ের-দোকানে-কাজ-করেও-সফল-কন্টেন্ট-ক্রিয়েটর
তাইতো তাকে একে একে করতে হয়েছে চায়ের দোকানের সহকারী, অফিসের পিয়ন, সেলসম্যান কিংবা নামমাত্র মজুরিতে মোবাইলে মেমোরি লোডের কাজ। সবসময়ই ভেবেছেন- আমি পারবো, পেরেছেনও। আজ তিনি একজন সফল ক্রিয়েটিভ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সজীব বলেন, বাড়িতে রাগারাগি করে কাউকে না জানিয়েই ২০১৪ সালে পা রেখেছিলাম ‘জাদুর শহর’ ঢাকায়। ভেবেছিলাম বোধহয় সহজ হবে। কিন্তু বুঝেই উঠতে পারিনি, সবাই মা-বাবার মতো কোমল হৃদয়ের না। সম্পর্কগুলো সব স্বার্থভিত্তিক। আর এ জিনিসইটাই আমাকে খুব আহত করে। এরপর হার না মন্ত্রে যুদ্ধটা চালিয়ে গেছি। কখনো এক বেলা, আবার কখনো বা আধা বেলা খেয়ে কাটিয়েছি। তবু কাউকে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেইনি ভালো নেই।
তিনি বলেন, এ শহরে কোনো বটবৃক্ষ, আত্মীয়স্বজন, অভিভাবক যাই বলেন না কেন, কেউই ছিলো না আমার। আমার বলতে ছিলাম, শুধুই আমি। মাঝে মাঝে যখন খুব খারাপ লাগতো, বাথরুমে গিয়ে কাঁদতাম। চোখ মুছতাম। তবে ভেঙে পড়তাম না। ভাবতাম, মিডিয়ায় যেহেতু আমার মামা-চাচা কেউ নেই, নেই প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাও, তার ওপর মাদরাসাছাত্র, তাই যা করার, নিজের গুণেই, নিজের যোগ্যতাতেই করতে হবে।
নিজেকে ‘মেধাবী’ দাবি না করে এ তরুণ তুর্কি বলেন, একেবারে অজপাড়া গাঁয়ের ছেলে আমি। মেধা বলতেও ওই অর্থে কিছু ছিল না। শুরুতে যখন ভিডিও বানানো শুরু করি, এমন হয়েছে ২০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে শুটিংয়ে যেতে হবে, সেই সাধ্যটাও ছিল না আমার। তাই স্ক্রিপ্ট লেখা, প্রোডাকশনের কাজ, ডিরেকশন দেওয়া সবই নিজের করতে হতো। দিন বদলালেও চর্চাটা এখনো রয়েছে। চেষ্টা করি নিজেই সব করতে। যতটুকু আছে, ততটুকু মেধাকে আরো শাণিত করতে। কারণ গন্তব্য বহুদূর। ইচ্ছে আছে সিনেমা বানানোর। জানি না পারবো কিনা। তবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি চেষ্টা থামবে না। চলবে।
বর্তমানে সজীব ওমরের ফেসবুক পেইজে (www.facebook.com/officialsojibomar) অনুসারীর সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার। নিত্যনতুন কন্টেন্টে তিনি প্রতিনিয়তই মুগ্ধ করছেন তাদের। অনুসারীরাও খুশি। কমেন্টে কিংবা ইনবক্সে জানাচ্ছেন নিজেদের ভালো লাগার কথা। দিচ্ছেন ইতিবাচক নানা উপদেশও। সানন্দ্যে তিনি তা গ্রহণ করে চেষ্টা করছেন সেসব রাখারও।
অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেও অনেক কন্টেন্ট ভাইরাল হওয়ার পরও নিজেকে ‘সফল’ মানতে নারাজ এ মেধাবী তরুণ। তার ভাষায়, তিনি এখনো শিখছেন। শিখেই যাবেন।
সজীব বলেন, ফেসবুকে ‘ব্রেকাপ স্টোরি অফ এ স্মোকার’, ‘ভয়ঙ্কর শীত’, কিংবা ‘পাসওয়ার্ড দিবি কিনা বল?’ কন্টেন্টগুলো সবাই পছন্দ করেছে। যেটাকে সবাই ‘ভাইরাল’ বলছে। আমি আসলে ভাইরাল বুঝি না। কোনো অসঙ্গতি, ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিজের মধ্যে কাজ করলেই সেটাকে কন্টেন্টে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করি। যেন মানুষের উপকার হয়, বিনোদিত হয়। কিন্তু শুরুর দিকে কিংবা এর আগে গ্রামে থাকতে কখনো ভাবিনি, টিভিতে নিজের কাজ দেখাবে কিংবা ফেসবুক-ইউটিউবে ঘুরে বেড়াবে, মানুষের মুখে মুখে থাকবে আমার কন্টেন্টের গল্প। ভাববো কী করে, এগুলো তো রীতিমত শখের পর্যায়ে পড়ে। আর এসব করা তখন আমার জন্য রীতিমতো বিলাসিতা। কারণ একে আমি বড় ছেলে। দ্বিতীয়ত পরিবারের ভার আমার কাঁধে। এরপরও সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় কিভাবে কিভাবে যেন সব হয়ে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ্।
কন্টেন্ট বানানোর পাশাপাশি সজীব ওমর নিজেও অভিনয় করেন। এ পর্যন্ত অভিনয় করেছেন ৪-৫ নাটকে। যেগুলো বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও ইউটিউবে প্রচারিত হয়েছে। হয়েছে প্রশংসিতও। তবু অভিনয়ের পরিবর্তে নির্মাণেই সব মনোযোগ তার। সময় পেলেই দেখেন বিভিন্ন দেশের নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ। আর বলেন- আমিও একদিন সিনেমা বানাবো। ফ্রেমে ফ্রেমে বলবো না বলা শত শত গল্প। যেসব গল্পে উঠে আসবে, সমাজ, বাস্তবতা, রাজনীতি ও প্রেম-ভালোবাসার কথা।