রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঋষি সুনাকের পদক্ষেপই বহাল, সংকটে লিজ ট্রাস

প্রকাশিত : ০৪:৫০ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২২ শনিবার

ঋষি-সুনাকের-পদক্ষেপই-বহাল-সংকটে-লিজ-ট্রাস

ঋষি-সুনাকের-পদক্ষেপই-বহাল-সংকটে-লিজ-ট্রাস

অবশেষে ঋষি সুনাকের কর্পোরেশন করের হার বাড়ানোর পদক্ষেপের কাছে হার মানলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তাই তার প্রধানমন্ত্রী পদ টিকিয়ে রাখা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কর্পোরেশন কর বাড়ার পদক্ষেপের বিপরীতের প্রচারণায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।

২০২২ সালের বছর মার্চের বাজেটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ২০২৩ সালের এপ্রিলে ১৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ কর্পোরেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। করোনা মহামারিতে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিতে কোম্পানিগুলোকে শতশত কোটি পাউন্ড সহায়তা করেছে সরকার। তাই তাদের সুসময়ে এ বাড়তি কর চাওয়া অন্যায় কিছু নয়।

বরিস জনসন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণার পর পদটিতে নিয়োগের জন্য সরাসরি কনজার্ভেটিভস সদস্যের সরাসরি ভোট হয়। তখন কর্পোরেশন কর বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালান লিজ ট্রাস। এতে দলের শীর্ষ নেতা ও দলীয় সদস্যের কাছে জনসমর্থন হারান ঋষি সুনাক।

লিজ ট্রাস সরকার গঠনের পর অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন কোয়াসি কোয়ার্তেং-কে। তিনি মিনি-বাজেটের আওতায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। তাই বাধ্য হয়ে গত ১৪ অক্টোবর কোয়াসিকে বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে কর্পোরেশন কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন লিজ ট্রাস। শুক্রবার তার কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় সুনাকের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। 

লিজ ট্রাস শুক্রবার তার বক্তব্যে স্বীকার করেন, বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে এ সিদ্ধান্ত আরো বেশি এবং দ্রুত নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন ঋণদাতাদের কাছে ব্রিটেনের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা এখন আমার লক্ষ্য। মাঝারি মেয়াদে জিডিপির শতাংশ হিসাবে ঋণ কমছে তা নিশ্চিত করতে ‘সবকিছু’ করা হবে।

কোয়াসি কোয়ার্টেংকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত হন ঝানু রাজনীতিবিদ ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। হান্ট চলতি বছর নিয়োগ পাওয়া যুক্তরাজ্যের চতুর্থ অর্থমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে লিজ ট্রাস ঘোষণা করেন, কর্পোরেশন ট্যাক্সের পরিকল্পিত বৃদ্ধি পুনর্বহাল হবে। এ পদক্ষেপ ব্রিটিশ সরকারের ঋণের উভয় গ্রহীতাদের সন্তুষ্ট করতে ডিজাইন করা হয়েছিল। 

অথচ ঋষি সুনাকের সেই পদক্ষেপ গত ২৩ সেপ্টেম্বর বাতিল করেছিলেন কোয়াসি কোয়ার্তেং। এতে তার নিজের দলের লোকরাই সমালোচনায় ফেটে পড়েন। তিনি এখনো উভয় গ্রুপকে আশ্বস্ত করতে যথেষ্ট কাজ করেননি।

দলের ভেতরে অনেকে বলছেন, ট্রাসের বৈপরীত সিদ্ধান্ত অপমানজনক। কর্পোরেশন ট্যাক্সের পরিকল্পিত বৃদ্ধি বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বে প্রচারে নেমেছিলেন।

ফলস্বরূপ, এপ্রিল থেকে আড়াই লাখ ইউরো মুনাফাসহ যাদের আয় বেশি তাদের কর ১৯ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে, যা ফ্রান্স ওজার্মানির সঙ্গে তুলনীয় একটি স্তর। এটি রাজকোষে ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ১৯ বিলিয়ন পাউন্ড জমা করবে। তবুও এটি যুক্তরাজ্যের সরকারকে একটি আর্থিক গর্ত থেকে বের করে আনতে অপর্যাপ্ত। কারণ মূলত নিজেরাই অর্থনৈতিক সংকটের খাল খনন করেছে তারা। 

এ বিবৃতির আগে একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ফিসকাল স্টাডিজের কার্ল এমারসন ও ইসাবেল স্টকটন বলেন, ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য ২০২৬-২৭ সালে প্রায় ৬২ বিলিয়ন পাউন্ড কমাতে হবে।

সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী কোয়াসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পাবলিক চিঠিতে ট্রাস লেখেন, তিনি (কোয়াসি) পরিকল্পনা আইনে কাঠামোগত সংস্কার করেছেন। এ সংস্কারগুলো কেবল কাগজে-কলমে বিদ্যমান। সংসদের মাধ্যমে একটি কঠিন যুদ্ধের মুখোমুখি।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের দেশের জন্য একই দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবৃদ্ধির দৃঢ় প্রত্যয় শেয়ার করি। তিনি লেখেন, এখনো  আমার প্রত্যয় বাকি।

ট্রাস বলেছেন, ব্যয় আগের পরিকল্পনার চেয়ে কম দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সরকার কোথায় সরকারি ব্যয় কমাতে পারে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার অর্থ হলো বিনিয়োগকারীরা এখনো আতঙ্কিত। নতুন অর্থমন্ত্রী হান্টের কাছ থেকে অর্থযোগ করার পরিকল্পনা শোনার জন্য ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বিনিয়োগকারীদের।