অনন্য দৃষ্টান্ত!
প্রকাশিত : ০৭:১৫ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২২ শনিবার
অনন্য-দৃষ্টান্ত
দেশের সবচেয়ে বেশি সরকারি কর্মচারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পেনশনের সময় তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য পরিমান ভোগান্তি পোহাতে হয় এটা সবারই জানা। বি বাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উপজেলা শিক্ষা অফিসার নৌসদ মাহমুদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষকদের ল্যাম্পগ্র্যান্ট ও পেনশন এর অর্ডার এর কপি নিজ হাতে শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাকালীন সময় থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নৌসাদ মাহমুদ অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পেনশন ও ল্যাম্পগ্র্যান্ট এর অর্ডার এর কপি পৌঁছে দিয়ে আসছেন। মুঠো ফোনো উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তিনি ২০০৪ সালে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি বিষয় তার মনে দাগ কাটে।
ঘটনাটি ছিলো অবসরে যাওয়া এক বৃদ্ধ শিক্ষক পেনশনের অর্ডার না পেয়ে খুব কান্নাকাটি করছিলেন। সে সময় তিনি প্রতিজ্ঞা করছিলেন, তিনি কখনো এই দায়িত্বে গেলে কোন শিক্ষককে এমন ভোগান্তিতে পড়তে দিবেন না। তিনি সে পথেই হাটছেন।
২০১৪ সালে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর দায়িত্ব পান। এরপর থেকে তিনি পেনশনে যেন শিক্ষকদের ভুগান্তি না হয় সে দিকে খুবই আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। ২০২০ এর মার্চ থেকে বাংলাদেশে কোভিড ১৯ তথা করোনার আবির্ভাব ঘটে। এ দুর্যোগের সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন পেনশন ও ল্যাম্পগ্র্যান্ট এর আদেশ এর কপি শিক্ষকদের বাসায় গিয়ে দিয়ে আসবেন এবং শুরুও করলেন। সেই থেকে অদ্যাবদি তার উপজেলায় এ নীতিই চলামান।
ফোনে তাকে বাড়ি গিয়ে পেনশন আদেশ দিয়েছেন কেনো প্রশ্ন করা হয়েছিলো। উত্তরে তিনি বললেন, একজন শিক্ষক ৩০ বছর শিক্ষকতা পেশায় কাজ করে পেনশনে যান। প্রায়শই পেনশনে ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমি অন্তত চেষ্টা করে চলেছি শেষ বয়সে তাদেরকে একটু মানসিক প্রশান্তি দিতে। এমন দৃষ্টান্তে তিনি প্রশংসায় ভাসছেন। শিক্ষকদের নিকট তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তার সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা পুরস্কার হিসেবে সম্প্রতি তার বদলির আদেশ হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা সংসদ সদস্য ঊর্ধ্বতনকে সুপারিশ করে তাকে বর্তমান স্টেশনেই রেখে দেন।
জানা যায়, আবদুল হালিম নামে একজন সহকারী শিক্ষক যার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মির্জাচর ইউনিয়নে। তিনি ২০০২ সালে বাঞ্ছরামপুর উপজেলার হায়দর নগর সপ্রাবি থেকে চাকরি শেষ করেন। কিন্তু তিনি কোনো সরকারি সুবিধা গ্রহণ করেননি। ওই শিক্ষক ২০১২ সালে মারা যান। ২০১৮ সালে
আব্দুল হালিমের পরিবার তার অবসর সুবিধা দাবি করেন। তারপর নৌসাদ মাহমুদ নিজ প্রচেষ্টায় পরিবারের হাতে জিপিএফসহ সকল ধরনের সরকারি আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
সর্বশেষ আজ তিনি জেসমিন বেগম, অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক, দরিয়াদৌলত দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঞ্ছারামপুর, বি-বাড়িয়া এর অবসর লাম্পগ্রান্ট ও পিআরএল এর অর্ডারের কপি শিক্ষিকার নিজ বাড়ি দরিয়াদৌলতে উপস্থিত হয়ে তার হাতে সমস্ত ডকুমেন্টস অর্পণ করেন।
নৌসাদ মাহমুদ নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউপির মধ্যনগর এলাকার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার হাজী সিনা গাজীর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন ( বিজেএমসি) এর ইউএমসি জুট মিলস, নরসিংদী এর মেডিকেল অফিসার ছিলেন। বড় হয়ে উঠেন নরসিংদীর সাটির পাড়া এলাকায়। ৭ম শ্রেণি থেকে সাটিরপাড়া কালীকুমার ইন্সটিটিউট এ পড়াশোনা করে। এখান থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। তারপর উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে তিনি ১৯৯৬ সালে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। তার মতো সৎ কর্মকর্তা সত্যিই বিরল।