মরার ১১ বছর পর হলেন ‘জীবিত’, নিলেন ঋণ!
প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২২ শুক্রবার
মরার-১১-বছর-পর-হলেন-জীবিত-নিলেন-ঋণ
পরেশ চন্দ্রের ‘ভুতুড়ে’ ঋণ নেয়ার এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে সোনালী ব্যাংকের জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল শাখার নথিতে। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঋণ ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করে ১০ হাজার টাকা নিলেও পরেশ চন্দ্র মারা গেছেন ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন।
মৃত পরেশের বাড়ি ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের পাঁচুইল গ্রামে। তার বাবার নাম কৈলাশ চন্দ্র। সম্প্রতি তার নামে ১০ হাজার টাকা এমসিডি ঋণ পরিশোধের জন্য এক নোটিশ পাঠায় সোনালী ব্যাংক।
ডাকযোগে পাঠানো ব্যাংকের রেজিস্ট্রি করা চিঠিটি গ্রহণ করেন পরেশের বড় ছেলে নরেশ চন্দ্র। চিঠি খুলতেই বাবার ১০ হাজার টাকার এমসিডি ঋণ পরিশোধের নোটিশ দেখেন তিনি। নোটিশটি দেখে রীতিমতো অবাকও হন।
নরেশ চন্দ্র বলেন, নোটিশ দেখে প্রথমে ভেবেছি বাবা জীবিত থাকতে হয়তো ঋণ নিয়েছিলেন। তবে এত বছর পর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে মনে খটকা লাগে। পরে নোটিশের নিচের অংশে গিয়ে দেখি ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঋণ নিয়েছেন আমার বাবা। অথচ ২৮ বছর আগে মারা গেছেন আমার বাবা।
অদ্ভুত এ চিঠি পেয়ে সোনালী ব্যাংকের ক্ষেতলাল শাখায় যান নরেশ। তবে নথিপত্র ঘেঁটে ঋণ নেয়ার তারিখ ঠিক আছে বলে জানান ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কিন্তু ২৮ বছর আগে বাবার মৃত্যুর কথা নরেশ জানালেও নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন তারা। এমনকি ঋণের নথিতে পরেশ চন্দ্রের নাগরিকত্ব সনদ, ছবি, জমির কাগজপত্র, স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজই আছে বলে দাবি ব্যাংক কর্মকর্তাদের।
‘ভুতুড়ে’ এ ঋণের বিষয়ে জানতে যাওয়া হয় সোনালী ব্যাংকের ক্ষেতলাল শাখায়। সেখানে রক্ষিত ৩২৮ নম্বর এমসিডি ঋণের নথিপত্রে নাম রয়েছে পরেশ চন্দ্রের। ছবি-নাগরিকত্ব সনদ, জমির কাগজ দিয়ে ঋণ ডকুমেন্টে স্বাক্ষর দিয়ে পরেশ চন্দ্র ১০ হাজার টাকা তুলেছেন বলে উল্লেখ করা হয় নথিতে। ব্যাংকের পাঠানো নোটিশের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে তথ্যেরও। তবে নরেশের অভিযোগের সত্যতা মেলে আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদে।
১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু রেজিস্ট্রার খোলা হয় আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদে। ওই রেজিস্ট্রারের ৩৮ নম্বর পাতার ৪৩ নম্বর সিরিয়ালে নাম রয়েছে পাঁচুইল গ্রামের পরেশ চন্দ্রের। যিনি ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন মারা যান বলে উল্লেখ করা হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে বুকের ব্যথার কথা। ২০২১ সালের ৯ মার্চ নরেশ চন্দ্রকে বাবার মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়।
ঋণের ১০ হাজার টাকা বড় কথা নয় বলে জানান পরেশের বড় ছেলে নরেশ চন্দ্র। তিনি বলেন, আমার বাবা মৃত্যুর ১১ বছর পর কীভাবে ব্যাংকে গিয়ে ঋণ তুলেছিলেন। মৃত্যুর পর আমার বাবা জীবিত হয়ে ফিরে আসার বিষয়টি হয়তো সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ছাড়া আর কেউ দেখেননি।
আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার বলেন, পরেশ চন্দ্রের মৃত্যুর তারিখ ইউপি কার্যালয়ের মৃত্যু রেজিস্ট্রারেই উল্লেখ রয়েছে। ইউপি কার্যালয় থেকে পরেশ চন্দ্রের মৃত্যুর সনদও নিয়েছেন তার ছেলে। কিন্তু মৃত্যুর ১১ বছর পর কীভাবে ব্যাংক তাকে ঋণ দিল বিষয়টি আশ্চর্যজনক।
সোনালী ব্যাংক ক্ষেতলাল শাখার ব্যবস্থাপক সিনিয়র প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা মো. আহসান হাবিব বলেন, পরেশ চন্দ্র ২০০৫ সালে কাগজপত্র ও স্বাক্ষর দিয়ে ঋণ নিয়েছেন বলে ব্যাংকের ঋণ নথিতে দেখা গেছে। ঋণটি এখনো পরিশোধ হয়নি। তাই ঋণের আসল টাকা পরিশোধের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।