সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছিল কেওড়া গাছ, এখন ৯০০ পরিবারের বাস

প্রকাশিত : ০৮:১৫ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার

ছিল-কেওড়া-গাছ-এখন-৯০০-পরিবারের-বাস

ছিল-কেওড়া-গাছ-এখন-৯০০-পরিবারের-বাস

চরটিতে ছিল মাত্র একটি কেওড়া গাছ। ৪০ বছর আগে এ গাছঘেরা চরেই শুরু হয় বসতি। এক-দুই করে বাড়তে থাকে কুঁড়েঘরের সংখ্যা। শুরু হয় কৃষি চাষও। গড়ে ওঠে হাট-বাজার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর মাছঘাট। তবে আধুনিকতার ছোঁয়া পেলে বদলে যাবে এ চর। বদলে যাবে ৯০০ পরিবারের জীবনও।

বলছি মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চর আবদুল্লার কথা। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার এ ইউনিয়নটির পথচলা শুরু হয় ১৯৮২ সালের পর। উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে এ চরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটারের বেশি। এখানে বসতি গড়ে তোলেন রামগতি ও হাতিয়া অঞ্চলের ভূমিহীনরা।

এ উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও চর আবদুল্লায় এখনো অনুন্নত রয়েছে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কাঁচা সড়কেই মাইলের পর মাইল হেঁটে পাড়ি দিতে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।

গ্রামের স্কুলপড়ুয়া শিশুরা

চরের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী থেকে দুটি সংযোগ খাল। কাইছার খাল আর চেয়ারম্যান খালের কয়েকটি স্থানে রয়েছে কাঠের পুল। তবে কিছু কিছু স্থানে এখনো সাঁতরে খাল পার হতে হয়। প্রায় ৯০০ পরিবারের বসতির এ চরে নেই ভালো মানের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাথমিক থাকলেও বন্ধ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্বাস্থ্যসেবাও নেই তেমন।

নেই পাকা সড়ক

দক্ষিণ চর আবদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাকপ্রাথমিকে শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৮ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৯৬, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১০৩, তৃতীয় শ্রেণিতে ৬০, চতুর্থ শ্রেণিতে ৬৫ ও পঞ্চমে ১২ জন রয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র ১৮৪ ও ছাত্রী ২৩১ জন। ৪১৫ জন শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত মাত্র ৬০ শতাংশ। বাকিরা নানা কারণে ঝরে পড়ছে।

চরের মানুষের জীবনচিত্র নিয়ে কথা হয় অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, চর আবদুল্লাহ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র একটি ওর্য়াড ছিল মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে। তবে সেটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি আটটি ওয়ার্ড রয়েছে মেঘনা নদীর মাঝখানে। চরে গ্রামের সংখ্যা ছিল পাঁচটি আর হাটবাজার ছিল তিনটি। ভাঙতে ভাঙতে গ্রামের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুটিতে। তিনটি থেকে দুটিতে এলো বাজারের সংখ্যা।

গ্রামীণ চিত্র

সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, চরের উত্তর অংশ ভাঙতে ভাঙতে পরিধি ছোট হয়ে আসছে। নদীভাঙনে চরের জমি, বসতি, একটি বিদ্যালয় ভবন, একটি বাজার, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক বিলীন হয়ে গেছে। ফলে দিন দিন কমছে চরের জনসংখ্যা। ১৫ বছর আগেও চরে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের বসতি ছিল।

চরের বাসিন্দা আবদুল মালেক, মো. ইসমাইল হোসেন, শেখ ফরিদসহ কয়েকজন বলেন, বিভিন্ন কারণে এ চরে অনেকেই থাকছেন না। অনেকে চর ছেড়ে রামগতির বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। তবে ভূমিহীনরা কোথাও যেতে পারছেন না।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, দুর্গম চর হওয়ায় বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাসিন্দারা। তবে শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।