দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে, সতর্ক থাকুন: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ০৭:১০ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার
দায়িত্বজ্ঞানহীন-কেউ-যেন-ক্ষমতায়-না-আসে-সতর্ক-থাকুন-প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের পরিচয় দিয়েছিল। তারা বলেছিল ‘যত লোক মারা যাওয়ার কথা ছিল তত লোক মারা যায় নাই।’ ভবিষ্যতে ঐ রকম কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে সেজন্যও দেশবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’ উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তিনি ৫০টি মুজিব কিল্লা, ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও তথ্যকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ’৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন- ‘যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই।’ আমি তখন তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম- ‘আর কত মানুষ মারা গেলে আপনার মনে হবে যে তত মানুষ মারা গেছে?’ ঐ দূর্যোগে শুধুমাত্র বিএনপি সরকারের অবহেলায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। দেশের মানুষ যে মরছে সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে থাকলেও দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায়। পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে আমরা খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করে ঘুর্ণি দুর্গতদের পুনর্বাসন ও কুতুবদিয়া থেকে ছোট্ট একটি ছেলেকে ঢাকায় এনে পুনর্বাসন করি। মা-বাবাসহ সর্বস্ব হারানো ছেলেটিকে ট্রমা সেন্টার থেকে চিকিৎসা করিয়ে নিজের কাছে রেখে দেই এবং পরে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে চাকরি দেই। বেশ কয়েক বছর পর ছেলেটি চট্টগ্রামের আনোয়ারায় তার ভাইয়ের পরিবারের সন্ধান পায়।
তিনি আরো বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে- দেশের ভৌগলিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে দুর্যোগ মোকাবিলায় নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করে নিতে হবে। কাজেই উপকূলীয় অঞ্চলে বৃক্ষায়ণের মাধ্যমে যত বেশি আপনারা সবুজে আচ্ছাদিত করতে পারবেন তত বেশি আমরা দেশকে বাঁচাতে পারবো। আগামী প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে সেজন্য সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে। আরো কিছু পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। যেকোনো দুর্যোগ থেকে আমাদের দেশকে রক্ষার ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেতন।
সরকার প্রধান বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনায় সারাদেশকে দুর্যোগের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ৬টি দুর্যোগ হটস্পটে বিভক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, দুর্যোগ ঝুঁঁকি হ্রাস, দুর্যোগের সাড়াদান প্রস্তুতি ও দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০২১-২০২৫ সাল মেয়াদের জন্য জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যতই দুর্যোগ আসুক আমরা তা মোকাবিলায় নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছি। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। আজকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে একটি অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। আজ ২৫টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র, ৫০টি মুজিব কিল্লা ও ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। আশা করি, দুর্যোগের ঝুঁঁকি হ্রাস তথা জানমালের সুরক্ষায় এগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এছাড়া দেশের ১৩টি উপকূলীয় জেলায় স্যাটেলাইট টেলিফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ‘১০৯০’ নম্বরে টোল ফ্রি সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি প্রশমনে ঘরবাড়ি ও অট্টালিকা নির্মাণে অবশ্যই বিল্ডিং কোড ও আইন মানার এবং এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখার কথা স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। একদিকে করোনা তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-এসব মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার বিতরণ করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।