সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছোট্ট বিজয়ের শরীরে যে কারণে খুনির নৃশংসতা

প্রকাশিত : ০৯:১৫ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২২ বুধবার

ছোট্ট-বিজয়ের-শরীরে-যে-কারণে-খুনির-নৃশংসতা

ছোট্ট-বিজয়ের-শরীরে-যে-কারণে-খুনির-নৃশংসতা

বগুড়ার শাজাহানপুরে নিখোঁজ শিশু বুলবুল হোসেন বিজয় নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটির সারা শরীরে খুনিদের নৃশংসতা ছিল। তার লাশ উদ্ধারের পরপরই হত্যাকাণ্ডে জড়িত এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সেই যুবক হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

বুধবার বিকেলে আদালত স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেয় আদালত। 

এর আগে, মঙ্গলবার সকালে শাজাহানপুর উপজেলার লক্ষীকোলা গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঐদিন বিকেলে  বিজয় হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। একই সঙ্গে তার দেওয়া তথ্যমতে অভিযান চালিয়ে লক্ষীকোলা গ্রাম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার রাতে আসামিকে সঙ্গে নিয়েই ওই লক্ষীকোলা গ্রামে অভিযান চালানো হয় বলে জানান শাজাহানপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রউফ।

গ্রেফতারকৃত যুবকের নাম সুজন সরকার। ২৮ বছরের সুজন শাজাহানপুর উপজেলার লক্ষীকোলা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম জাফর সরকার।

৯ বছর বয়সী বিজয় একই গ্রামের সাইদুল ইসলাম সরকারের ছেলে। সে লক্ষিকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

জানা গেছে, গত ৫ অক্টোবর সকালে বাড়ি থেকে বের হয় বিজয়। সকাল ১০টা পর্যন্ত তাকে গ্রামেই ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। এরপর দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও শিশুটি আর বাড়ি ফেরেনি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি পরিবারের লোকজন।

পরে সোমবার রাত ১১টার দিকে লক্ষ্মীকোলা গ্রামের এসএএম নামে একটি বন্ধ থাকা ইটভাটার কাছে যেতেই দুর্গন্ধ পান স্থানীয়রা। বিষয়টি সন্দেহ হলে বিজয়ের স্বজনদের ডেকে ইটভাটার দিকে এগিয়ে যান স্থানীয়রা। তারা ইটভাটার চুল্লীর (ডাম্প) ঢাকনা খুলে ভিতর টর্চ লাইটের আলোতে বিজয়ের লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। 

খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে লাশটি উদ্ধার করে বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। বিজয়ের গলাসহ হাত-পায়ের রগ কাটা ছিল। এছাড়া তার শরীরে আরো অনেক জখম ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, বিজয় ও আসামি সুজন পূর্ব পরিচিত। তাদের বাড়িও পাশপাশি। গত ৫ অক্টোবর বিজয় সুজনের বাড়িতে যায়। তারা বাড়িতে বসে গল্প করার এক পর্যায়ে ফুটবল খেলার উদ্দেশে সুজনের বাড়ি থেকে বের হয়। তারা একসেঙ্গ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ঐ সময় বিজয় আসামি সুজনের মাকে জড়িয়ে গালি দেয়। এতে সুজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিজয়ের গলাচেপে ধরে তাকে হত্যা করে। পরে বিজয়ের লাশ লক্ষীকোলা গ্রামের একটি কবরস্থানের পাশের বাঁশবাগানে রেখে এসে নিজ বাড়িতে চলে যায় সুজন। হত্যার পর ঐদিন দুপুরে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিল সুজন। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে বের হয়ে শুনতে পারে যে, বিজয়কে সবাই খোঁজাখুঁজি করছে। এতে সুজন ভয় পেয়ে যায়।

তিনি আরো জানান, ঐদিন রাতে বিজয়ের লাশ দেখতে ঐ বাঁশবাগানে যায় সুজন। গিয়ে দেখে বিজয়ের লাশ সেখানে আছে। সেখানে থেকে ফিরে এসে বাড়ি থেকে ধারালো চাকু নিয়ে সুজন ঐ রাতে আবারো বাঁশবাগানে যায়। এবার সেখানে গিয়ে চাকু দিয়ে বিজয়ের গলাসহ হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় সুজন। একই সঙ্গে ঐ রাতেই বিজয়ের লাশ গুম করার উদ্দেশে পাশের বন্ধ থাকা এসএএম ইটভাটার চুল্লীর ভেতর ফেলে দেয়। পরে সেই চুল্লীর ঢাকনা বন্ধ করে দেয় সুজন। বন্ধ ইটভাটার পাশ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিহতের পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করেছে সুজন।