ইউক্রেন যুদ্ধে কী কৌশলে আছে রাশিয়া?
প্রকাশিত : ০৪:৫০ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২২ বুধবার
ইউক্রেন-যুদ্ধে-কী-কৌশলে-আছে-রাশিয়া
ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোতে করা হয়েছে। এতে অনেক এলাকা এখন বিদ্যুৎবিহীন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতায় পানি সরবরাহ ও ঘর গরম রাখার ব্যবস্থাও এখন অচল।
সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার দখল করা অনেক এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেনের সেনারা। তাই বাধ্য হয়ে তিন লাখ সৈন্যের রিজার্ভ তলব করেছে রাশিয়া। আর ইউক্রেনকে আরো সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র আর বিমান হামলা শুরু করলো. রাশিয়া।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কী কৌশল হচ্ছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কথিত অভিযানের পর ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক হামলা চালায়নি রাশিয়া। তবে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনার পরই অন্য রূপ নিল রাশিয়া।
প্রেসিডেন্ট পুতিন জানান, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার তৈরি একটি সেতুর বিস্ফোরণের জন্য ইউক্রেন দায়ী। ঐ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর নির্দেশ দেন তিনি।
কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সমর কৌশল বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো রাশিয়া। তবে তারা ইউক্রেনে পুরাদস্তুর সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে না। এ হামলা ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি মস্কোর একটি অগ্রীম বার্তা।
তিনি বলেন, রাশিয়া প্রথমে কিয়েভে আক্রমণ চালিয়ে ইউক্রেনের সরকারের পতন করতে চেয়েছিল। একইসঙ্গে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ডোনেস্ক ও লুহানস্ক এলাকাগুলো এবং দক্ষিণের কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়া। তারা কিয়েভ বা উত্তরের এলাকায় সাফল্য পায়নি। তবে পূর্বাঞ্চলে ও দক্ষিণ এলাকায় কিছুটা সফলতা পেয়েছিল। তবে গত ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে ন্যাটোর ব্যাপক সমর্থনপুষ্ট হয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে রুশ বাহিনীকে অনেকটা হটিয়ে দিতে পেরেছে।
ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে রাশিয়ার দখলে থাকা প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় রুশ সেনারা। এর মধ্যে বড় সফলতা হলো ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সংযোগ সেতুতে গাড়ি বোমা হামলা।
অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, আমার ধারণা, সেজন্য সৈন্য না পাঠিয়ে, ভূমি যুদ্ধ না করে, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনীয়দের বুঝিয়ে দিতে চাইছে যে যুদ্ধ এখানেই আপাতত তোমরা ঠেকিয়ে রাখো। বেশি বাড়াবাড়ি করলে পাল্টা আক্রমণ করার সম্ভাবনা ও সামর্থ্য রাশিয়ার রয়েছে। ইউক্রেন ও ন্যাটোকে সেটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিতে চাইছে রাশিয়া।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েছে। ইউক্রেনীয়রা সাফল্য পেতে থাকলে, রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণে যেসব এলাকা দখল করেছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।
ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সমর বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক মুরাত আসলান বলেন, এসব হামলার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার জনগণের কাছেও প্রমাণ করতে চান যে, তিনি রাশিয়ার স্বার্থকে রক্ষা করতে সক্ষম। ক্রিমিয়ার সেতুতে হামলায় এটা প্রমাণ হয়েছে , রাশিয়ার সৈন্যরা দেশকে বাইরের হামলা থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারছে না। যার ফলে তিনি নিজের দেশের জনগণকে জানাতে চান যে, রাশিয়ার ওপর হামলা হলে তারা শক্ত পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।
সূত্র- বিবিসি বাংলা।