নতুন রূপে-নতুন রুটে শাহ আমানত
প্রকাশিত : ০১:১৫ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২২ বুধবার
নতুন-রূপে-নতুন-রুটে-শাহ-আমানত
প্রতিষ্ঠার আট দশক পর এবার অবকাঠামোগত সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশের অন্যতম এ বিমানবন্দর। ২০২৩ সালের জুন মাসের আগেই শেষ হবে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। এরই মধ্যে যার ছোঁয়া লেগেছে বিমানবন্দরের রাজস্ব আয়ে। প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরের বিমানবন্দর হিসেবে শত কোটি টাকা আয় করেছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্যমতে, গত অর্থবছরে তাদের রাজস্ব আয় ছিল এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১০৬ কোটি টাকা আয় করে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এম ফরহাদ হোসাইন খান বলেন, গত অর্থবছরে আমরা সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় করেছি। সামনের অর্থবছরে আরো ভালো কিছু হবে বলে আশা করছি।
নতুন রূপ
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এটিকে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন তারা।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক সেবার মান উন্নত করতে বর্তমানে ৭০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলে করণ প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়েছে বডি স্ক্যানার। ৫৪০ কোটি টাকা খরচে এগিয়ে চলছে বিমানবন্দরে রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণের কাজ। এছাড়া শুরু হতে যাচ্ছে বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, কানেক্টিং করিডোর ও ডিপার্চার লাউঞ্জ নির্মাণের কাজ।
এম ফরহাদ হোসাইন খান বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ, কার্গোওয়ার হাউস নির্মাণ, প্যারালাল ট্যাক্সিওয়ে, হাইস্পিড টেক্সিওয়ে, টার্মাক সম্প্রসারণ করা হবে। এর মধ্যে রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ দিকে। সপ্তম লেয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। অষ্টম লেয়ারের কাজ চলছে। এটির মাধ্যমে রানওয়ের কার্পেটিং ও লাইটিং সিস্টেম উন্নত করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আগামী বছরের জুনের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, কানেক্টিং করিডোর ও ডিপার্চার লাউঞ্জ নির্মাণের ঠিকাচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এ কাজ শেষ হবে।
টার্মাক সম্প্রসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ১০টি বিমান টার্মাকে অবস্থান করতে পারে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নতুন দুটি বিমান রাখার ব্যবস্থা হবে।
নতুন রুট
পর্যাপ্ত যাত্রী থাকলেও চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক এ বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে নেই সরাসরি ফ্লাইট। ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে যেতে হয় রাজধানী ঢাকা হয়ে। এতে যেমন সময় লাগে বেশি। তেমনি হয় অর্থের অপচয়।
ফলে বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন রুটে ফ্লাইট চালু করতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম-ব্যাংকক এবং চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে চিঠি দেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বর্তমানে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছয়টি বিদেশি ও দুটি দেশি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম-দুবাই রুটে ফ্লাই দুবাই, চট্টগ্রাম শারজাহ ও আবুধাবি রুটে এয়ার আরাবিয়া, চট্টগ্রাম-কুয়েত রুটে জাজিরা এয়ার ওয়েজ, চট্টগ্রাম-মাস্কাট রুটে ওমান এয়ার ও সালাম এয়ার এবং চট্টগ্রাম-কলকাতা রুটে স্পাইস জেট। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান জেদ্দা, দুবাই, ওমান ও শারজাহ এবং ইউএস বাংলা মাস্কাট ও দোহা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এম ফরহাদ হোসাইন খান বলেন, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ১২টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের আগমন ও বহির্গমন হয়। পাশাপাশি ১৫ থেকে ১৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এসব ফ্লাইটের মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে বছরে প্রায় ১০ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করছে। অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীর পরিমাণ প্রায় আট লাখ। সব মিলিয়ে এক বছরে এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেন সাড়ে ১৭ লাখের বেশি যাত্রী।
তিনি বলেন, চলতি বছরে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুটি নতুন রুট চালু হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমান শারজাহ ও জাজিরা এয়ার ওয়েজ কুয়েতে যাত্রী পরিবহন করছে, যা আমাদের একটি অর্জন।