মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালিশে গৃহবধূকে পিটিয়ে কেড়ে নিলো তার সন্তান

প্রকাশিত : ০৯:১৫ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার

সালিশে-গৃহবধূকে-পিটিয়ে-কেড়ে-নিলো-তার-সন্তান

সালিশে-গৃহবধূকে-পিটিয়ে-কেড়ে-নিলো-তার-সন্তান

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে হামলা চালিয়ে গৃহবধূকে পিটিয়ে আহত করেছে শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদরা। এছাড়াও ওই গৃহবধূর ১৮ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেছেন হামলাকারীরা।

আহত গৃহবধূ মোসা. শাহেনা আক্তার বর্তমানে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

এ ঘটনায় গৃহবধূর মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে ৪ দিনেও দুধের শিশুটি উদ্ধার না হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে আছে শিশুটির মা শাহেনা আক্তার।

মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রায় ৩ বছর পূর্বে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গোপালনগর গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অলুয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. আবদুল্লাহর বিয়ে হয়। বিয়ের সময় স্বর্ণালংকার আসবাবপত্রসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল প্রদান করে কনের পরিবার। বিয়ের কিছু দিন পর স্বামী আবদুল্লাহ প্রাইভেটকার ক্রয়ের কথা বলের ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে কনের পরিবার ৩ লাখ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে।

পরে টাকা নিয়ে আবদুল্লাহ বিদেশে চলে যান। বিদেশে যাওয়ার ৬ মাস পর আবদুল্লাহ দেশে থাকা স্ত্রী ও সন্তানের কোনো খোঁজ খবর নেন না এবং ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। এদিকে বাড়িতে থাকা শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদরা গৃহবধূর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর রাতে মালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে গৃহবধূর শ্বশুরবাড়িতে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ বৈঠক বসে।

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বৈঠকে উভয় পক্ষের কথা শুনে জুড়ি বোর্ডের মাধ্যমে দেন মোহরের ৩ লাখ, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্রের ৩ লাখ, গাড়ি ক্রয়ের জন্য দেওয়া ৩ লাখ ও গৃহবধূর ভরণপোষন ববাদ ১ লাখ, সর্বমোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে গৃহবধূকে তালাকের রায় ঘোষণা হয়।

রায়ের কিছুক্ষণ পর গৃহবধূর শ্বশুর আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে লাঠি ও দা দিয়ে গৃহবধূর ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা গৃহবধূকে পিটিয়ে আহত করে তার শিশুকে ছিনিয়ে নেন। এ সময় হামলাকারীরা গৃহবধূকে ঘরের ভেতরে একটি রুমে আটকে মারধর করতে থাকেন।

সালিশে উপস্থিত লোকজন ব্রাহ্মণপাড়া থানায় খবর দিলে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এদিকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা গৃহবধূর ১৮ মাসের শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ আহত অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল জানান, এ ঘটনায় সোমবার থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।