সাদা মেঘে লুকিয়ে হাসছে সোনালী সূর্য
প্রকাশিত : ০৬:১৫ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার
সাদা-মেঘে-লুকিয়ে-হাসছে-সোনালী-সূর্য
দিগন্তময়ী শুভ্রতা লোকালয় ছেড়ে পৌঁছে গেছে সবুজ প্রকৃতির নগরীখ্যাত গাজীপুরের কালীগঞ্জে। উপজেলার তুমলিয়া বিভিন্ন এলাকা ও নাগরী ইউনিয়নের পূর্বাচল এখন সাদা সাদা কাঁশফুলের দখলে। সাদা মেঘের খুনসুটি আর দিগন্তজোড়া কাশফুলের বাতাসে দোল খাওয়ার দৃশ্য যেন মন কাড়ে সবার। প্রতিবছর শরতের এই সময়টাতে স্থানগুলো যেন মিলনমেলায় পরিণত হয়।
ঠাণ্ডা শীতল বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা কাশফুল। আর এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রায়ই ভিড় জমাচ্ছেন কাশবনের আশেপাশে অবস্থান করা মানুষেরা। কেউ কেউ আবার স্বপরিবারেও ঘুরতে আসেন। আবার কেউ প্রিয়জনের সাথে এসেছেন সোনালী শরতের মিষ্টি গন্ধের স্বাদ নিতে।
কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের কামারবাড়ি এলাকার তায়েবা পাম্পের সামেন, তুমলিয়া ইউনিয়নের উত্তরসোম এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে, নাগরী-উলুখোলা সড়কে এবং উপজেলার পূর্বাচল এলাকার বিভিন্নস্থানে যেন সাদা কাশফুলের মেলা বসেছে। সাদায় সাদায় মুখরিত। অনেকে মুক্ত মনে সাদা কাশফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছেন, সুন্দর সেই অনুভূতিগুলো আবার কেউ কেউ সেলফি তুলছেন।
প্রতি বছর শরতের আগমনে এই কাশবনকে নিয়ে শরৎ প্রেমিদের কোলাহল বাড়ে। থোকায় থোকায় কাশফুল যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে সবাইকে। কাশফুল তুলতে হিড়িক পড়ে তাদের কারো কারো মাঝে।
কাশবন নিয়ে কথা হয় উপজেলার উত্তরসোম এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ঘুরতে আসা শিশু রাফসান নুর রাফির (৯) সাথে। সে জানায়, কাশবন তার খুব খুব পছন্দ। বিশেষ করে বাতাসে যখন কাশবন দোল খায় এটা দেখতে তার খুবই ভাললাগে। তাই বাবার সাথে ঘুরতে এসেছি।
রাফসান নুর রাফির বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, শরতের কাশফুল আমারও খুব ভালো লাগে। এটা শুধু আমার না, বোধ করি দেশের অধিকাংশ মানুষেরই এই শরতের কাশফুল পছন্দ। এমনিতে সময়-সুযোগ খুব একটা পাই না। ছুটির দিনে ছেলের অনুরোধে ঘুরতে এসে একসাথে বাপ বেটার কাশবন দর্শন করলাম।
বাংলাদেশ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিয়ের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী নিশাত বলেন, শরৎ মানেই কাশফুল, নীল আকাশ আর দিগন্ত জোড়া সবুজের সমারোহ। আর কাশফুল হলো শরৎ, প্রকৃতি এবং বাংলার মানুষের এক চিরন্তন সঙ্গী। এটা কাউকে বিমর্ষ করে না। কাঁশফুলের সৌন্দর্য আমাদের মনের সৌন্দর্যকে সমৃদ্ধ করে।
ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী যীনাত রহমান বলেন, বাংলাদেশে ঝকঝকে নীল আকাশ, ঝলমলে সূর্য, অফুরান প্রাণশক্তি এবং পূঁজোর আমেজ নিয়ে আসে শরৎকাল। সবুজ প্রকৃতির কালীগঞ্জে তাই শরতের পূর্ণ আমেজ পাওয়া যায়। এখানকার বিল ভর্তি শাপলা ও পদ্ম ফুল, গাছে গাছে শেফালী, জুঁই, শিউলী কামিনীসহ উপজেলা জুড়ে শরতের স্মারক কাশফুল যেন সেজে ওঠে শরৎকে বরণ করে নিতে। শরতকে বরণ করে নিতে স্থানীয়রাসহ দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন এখানে।
নাগরী সেন্টনিকোলাস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো. বিপ্লব হোসেন বলেন, বিকেল হলেই মাঝে মাঝে শরৎ উপভোগ করতে যাই। কিন্তু শরৎ উপভোগ করতে করতে কখন যে প্রকৃতির আকাশে সন্ধ্যার আভা নেমে আসে বুঝতেই পারা যায় না। কাঁশবনেও যেন নেমে আসে বেলা শেষের স্তব্ধতা। এই স্তব্ধতার সুযোগে প্রতিদিন সূর্য মামাও বিদায় জানাতে পিছপা হয় না।