খুলল নাসিম ওসমান সেতু, শীতলক্ষ্যা পাড়ে প্রাণোচ্ছ্বাস
প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২২ সোমবার
খুলল-নাসিম-ওসমান-সেতু-শীতলক্ষ্যা-পাড়ে-প্রাণোচ্ছ্বাস
অবশেষে ১০ অক্টোবর সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু উদ্বোধন করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ রাজধানীর পাশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা। সব সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের সংগঠনের ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ ভূমিকা রেখেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
নাসিম ওসমান ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের সন্তান। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ছিলেন। তিনবারের এ এমপি ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল মারা যান।
সেতু উদ্বোধনীতে হাজার হাজার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পরেই বিনা বাধায় প্রথমদিন লোকজন এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত যাতায়াত করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, পদ্মাসেতু দিয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই চট্টগ্রাম যাতায়াত করতে পারবেন দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলসহ ৮ জেলার বাসিন্দারা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ও যাত্রীরা বর্তমানে যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা ব্রিজ হয়ে অথবা চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড রুটে চট্টগ্রামে যান। এখন শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে যানজট এড়িয়ে সহজে চট্টগ্রাম যেতে পারবেন।
১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে সক্ষম করবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর থেকে সেতুটি মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে শ্রীনগরের ছনবাড়ি পর্যন্ত যুক্ত করবে। এর মাধ্যমে পদ্মাসেতুর সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়ক নেটওয়ার্ক দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।
এই সেতুতে সংযুক্ত হচ্ছে দেশের ১৮টি জেলা। এর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই চট্টগ্রামে যাতায়াত করতে পারবেন দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলসহ ৮ জেলার বাসিন্দারা। সংযুক্ত জেলাগুলো হলো- নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি।
সেতুটির সঙ্গে নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে পদ্মা সেতু থেকে জনগণ সর্বোচ্চ সুবিধা পাবে । এই সেতু প্রকল্প ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণে ৬০৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৬৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫ দশমিক ২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।
ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে। পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২ দশমিক ১৫ মিটার। এছাড়া, ছয়লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক ও নির্মাণ করা হচ্ছে।
নতুন এই সেতুতে টোল হার অনুযায়ী, ট্রেলার ৬২৫ টাকা, হেভি ট্রাক ৫০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২৫০ টাকা, মিনি ট্রাক ১৯০ টাকা, বড় বাস ২২৫ টাকা, মিনিবাস ১২৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, প্রাইভেটকার ১০০ টাকা, ৩ চাকার মোটর বাহন ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১৫ টাকা, রিক্সা, ভ্যান, সাইকেল ঠেলাগাড়িকে ৫ টাকা টোল দিতে হবে।