মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘নারীর ফাঁদ’ পেতে পুরুষ শিকার ধরে ওরা

প্রকাশিত : ০৯:১৫ পিএম, ৯ অক্টোবর ২০২২ রোববার

নারীর-ফাঁদ-পেতে-পুরুষ-শিকার-ধরে-ওরা

নারীর-ফাঁদ-পেতে-পুরুষ-শিকার-ধরে-ওরা

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পুরুষদের টার্গেট করে প্রথমে ‘নারীর ফাঁদে’ ফেলা হয় । ধীরে ধীরে ঐ পুরুষদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা হয়। সুযোগ বুঝে সেই সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া হয় বিছানা পর্যন্ত। এরপরই বেরিয়ে আসে প্রতারক চক্রের আসল রূপ। ঘরে নিয়ে পুরুষদের করা হয় জিম্মি। পরে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় লাখ লাখ টাকা। এভাবে একের পর এক শিকার ধরে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয় এ চক্রের সদস্যরা। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারান ৪৫ বছরের জাকির হোসেন।

‘নারীর ফাঁদে’ পড়ে নিজের কাছে থাকা টাকা ঐ চক্রকে দেন জাকির। কিন্তু এতেও পার পাননি তিনি। টাকা দিতে হবে আরো, দাবি প্রতারক চক্রের। অবশেষে বিকাশে আরো টাকা দিয়েও প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারেননি জাকির।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কৈগাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই নারীসহ চারজনকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১২)। শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃতরা হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার গণ্ডগ্রাম ফকিরপাড়ার বাসিন্দা ২৫ বছরের সোমা আক্তার লিমা, লতিফপুর এলাকার ২৮ বছরের তাজুল ইসলাম, নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা গ্রামের ২০ বছরের রোফা আক্তার রোপা ও গাবতলী উপজেলার কালাইঘাটা গ্রমের ৩২ বছরের আব্দুর রাজ্জাক।

তাদের মধ্যে প্রথমে লিমাকে বগুড়া সদরের চিটাগাং আবাসিক হোটেল থেকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যমতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধুনট মোড় থেকে তাইজুল ইসলামকে আটক করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে রোপাকে শাজাহানপুর উপজেলা বি-ব্লক এলাকা থেকে আটক করা হয়। এরপর রোপার দেওয়া তথ্যমতে অভিযান চালিয়ে শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা এলাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাককে আটক করা হয় বলে জানান বগুড়া র‌্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার (স্কোয়াড্রন লিডার) মো. তৌহিদুল মবিন খান।

এর আগে, শুক্রবার রাতে বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আরো দুজনকে গ্রেফতার করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তারা হলেন- কৈগাড়ি পূর্বপাড়া এলাকার ২৪ বছরের আশরাফুল ইসলাম আশা ও ২৫ বছরের মোস্তফা কামাল ওরফে কমল। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।

নিহত জাকির চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাচিয়াখালি গ্রামের মৃত আনোয়ারুল হোসেন জমাদ্দারের ছেলে। তবে বর্তমানে পরিবারসহ শাজাহানপুর উপজেলার শাকপালা ক্যান্টনমেন্ট পাড়ায় ভাড়াবাসাতে বসবাস করতেন জাকির।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ফুলতলা এলাকায় জাকিরের একটি চা স্টল আছে। সেই দোকান থেকেই তাকে ডেকে নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় জিম্মি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঐ রাতেই শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন নিহতের স্ত্রী মমতাজ বেগম। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের চা স্টলেই ছিলেন জাকির। সেখানে দুজন নারী এসে দোকান থেকে তাকে ডেকে নিয়ে কৈগাড়ি এলাকায় নিয়ে যান। পরে জাকিরকে বাড়িতে নিয়েই দুই নারী প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের ডেকে নেন। ঐ সময় আটককৃত দুজনসহ আরো ছয়জন সেখানে উপস্থিত হয়ে জাকিরকে জিম্মি করেন। তারা জাকিরের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করেন। এ সময় জাকিরের কাছে টাকা দাবি করা হয়। নিজের কাছে থাকা ২ হাজার ৩০০ টাকা জাকির প্রতারক চক্রের সদস্যদের দেন। এ সময় জাকিরের কাছে আরো টাকা দাবি করা হয়। জাকির বাধ্য হয়ে বিকাশে আরো ১০ হাজার টাকা দেন।

এরই একপর্যায়ে জাকির পালানোর উদ্দেশে ঐ বাড়ির বারান্দা থেকে বাইরের দিকে দৌড় দেন। এ সময় আটক হওয়া আশা দৌড়ে এসে পেছন থেকে জাকিরকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয় লোকজন জাকিরকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল মবিন খান বলেন, আটককৃত সবাই প্রতারক চক্রের সদস্য। চক্রের নারী সদস্যরা সমাজের বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে কৌশলে সখ্য গড়ে তুলে ঘরে নিয়ে জিম্মি করেন। পরে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ধরনের কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। এই চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।