পুতিনের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানালেন কিম
প্রকাশিত : ১০:৫০ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০২২ শনিবার
পুতিনের-জন্মদিনে-শুভেচ্ছা-জানালেন-কিম
শুক্রবার (৮ অক্টোবর) পাঠানো এ বার্তায় ‘যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ এবং হুমকি’ চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়ার জন্য পুতিনের প্রশংসা করেছেন তিনি।
পিয়ংইয়ংয়ের সরকারি সংবাদসংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, শুভেচ্ছার চিঠিতে কিম পুতিনকে বলেছেন, 'আজ রাশিয়া নির্ভরযোগ্যভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের বাহিনীর চ্যালেঞ্জ ও হুমকি থেকে নিজ রাষ্ট্রের মর্যাদা ও মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করছে। আপনার বিশিষ্ট নেতৃত্ব এবং দৃঢ় ইচ্ছা ছাড়া এই ধরনের বাস্তবতা কল্পনা করা যায় না।'
উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া উভয় দেশই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন এখন। সেই দিক বিবেচনায় পুতিনের জন্য কিমের এই বিশেষ শুভেচ্ছা উভয়ের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠার ইঙ্গিত।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা বেড়ে গেছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার কাছে দেশটির মূল্য ক্রমশ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক সবসময় সোভিয়েত আমলের মতো উষ্ণ নেই ঠিকই, তবে এখন রাশিয়ার বন্ধুর প্রয়োজন হওয়ায় উত্তর কোরিয়া স্পষ্টতই মস্কোর কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে ঘনিষ্ঠতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক।
উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া সম্পর্ক কীভাবে শুরু হয়েছিল এবং কীভাবে তারা ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনায় রয়টার্স বেশকিছু দিক তুলে ধরেছে।
রাজনৈতিক সমর্থন:
কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া গঠিত হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের গোড়ার দিনগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে। ১৯৫০-১৯৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধেও চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েই উত্তর কোরিয়া লড়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ এর জাতিসংঘ মিত্রদের সঙ্গে।
দশকের পর দশক ধরে উত্তর কোরিয়া প্রচণ্ডভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ১৯৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর উত্তর কোরিয়া প্রাণঘাতী দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে।
উত্তর কোরিয়ার নেতারা চীন এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে ইচ্ছুক ছিলেন। তবে নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে এই দুই দেশের সম্পর্ক প্রথম প্রথম তুলনামূলক শীতলই ছিল। কারণ, দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের পথে হেঁটে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছিল।
কিন্তু ২০১৭ সালে উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার সময় নেতা কিম সম্পর্ক মেরামতের উদ্যোগ নেন। ২০১৯ সালে কিম এবং পুতিনের মধ্যে রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তক শহরে প্রথমবারের মতো বৈঠক হয়।
তখন থেকেই উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রকাশ্যে ভেটোও দিয়েছে তারা।
ইউক্রেন যুদ্ধে সমর্থন:
রাশিয়া যেমন উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দিয়ে এসেছে, তেমনি উত্তর কোরিয়াও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর মস্কোকে প্রকাশ্যেই সমর্থন দিয়েছে।
ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকাগুলোর স্বাধীনতাকেও উত্তর কোরিয়া স্বীকৃতি দিয়েছে, এমনকী এ সপ্তাহে ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণাকেও উত্তর কোরিয়া সমর্থন দিয়েছে।
“ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নতুন এক ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা বয়ে এনেছে, যেখানে ক্রেমলিন এবং উত্তর কোরিয়া উত্তরোত্তর ঘনিষ্ঠ হতে পারে,” বলেই অভিমত ভ্লাদিভোস্তকের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরতিওম লুঙ্কিনের।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার দিকে এগিয়েছে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ এবং অস্ত্র কেনার জন্য, যাতে যুদ্ধের কারণে খালি হওয়া অস্ত্রগুদাম তারা আবার ভরে নিতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি অস্বীকার করেছে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া উভয়ই।
অর্থনৈতিক বন্ধন:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার বেশিরভাগ বাণিজ্য চীনের মধ্য দিয়ে হলেও রাশিয়াও বাণিজ্য খাতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিশেষ করে তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে।
উত্তর কোরিয়ার ওপর জারি থাকা জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার কথা রাশিয়া অস্বীকার করে আসলেও এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে রাশিয়ার ট্যাংকারে করে উত্তর কোরিয়ায় তেল রপ্তানির অভিযোগ আছে। তাছাড়া, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার শ্রমিক থাকার কথা জানিয়েছেন নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষকরা।
কোভিড মহামারীর সময়ে উত্তর কোরিয়া তাদের সীমান্তে কড়া লকডাউনের পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য এবং অন্যান্য যোগাযোগ প্রায় পুরোই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
তবে সীমান্তে আরোপিত কিছু কঠোর নিষেধাজ্ঞা উত্তর কোরিয়া এখন শিগগিরই তুলে নেবে এবং তা করার যৌক্তিক কারণও আছে বলে জানিয়েছেন ভ্লাদিভোস্তকের ফার ইস্টার্ন ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুঙ্কিন। ট্রেনে বাণিজ্য শিগগিরই চালু করা হতে পারে- স্থানীয় সরকারের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে লুঙ্কিন একথা বলেন।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রকাশ্যেই উত্তর কোরিয়ার ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক নিয়োগের রাজনৈতিক ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তাছাড়া, ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলগুলোকে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে পুনর্গঠন করতে উত্তর কোরিয়ার শ্রমিক নেওয়া নিয়েও রাশিয়ার কর্মকর্তা ও নেতারা আলোচনা করেছেন।