দুস্থদের চাল নিয়ে ডিলারের চালবাজি
প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার
দুস্থদের-চাল-নিয়ে-ডিলারের-চালবাজি
এ নিয়ে অভিযোগও করেছেন দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মিনতি রাণী। তিনি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী সুবিধাভোগী। নিয়মিত তার নামে ১০ টাকা কেজি দরের (বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ টাকা কেজি) চাল কেনা হয়েছে। এটা জানতে তার সময় লেগেছে সাত বছর। শুধু তিনি একা নন, একই গ্রামের আরও ১১জন কার্ডধারীরও সাত বছর সময় লেগেছে সত্য ঘটনা জানতে।
শুধু ১২ জনের নামেই নয়, তিনি নিজের ও নিজের পরিবারের নামেও সুবিধাভোগীদের তালিকাভূক্ত করেছেন। অথচ তিনি ও তার স্ত্রী দুইজনেই স্কুলশিক্ষক। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালাহ উদ্দীন বলেন, তিনি যে অপরাধ করেছেন তাতে তার ডিলারশিপ বাতিল হবে এবং তাকে আত্মসাৎ করা চাল ফেরত দিতে হবে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপজেলা সভাপতি ইউএনও এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মসূচির চাল বিক্রির জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে দুইজন করে পরিবেশক নিয়োগ দেয়া হয়। তারা চালগুলো বিক্রি করবেন।
এই কর্মসূচির আওতায় দুস্থদের তালিকা প্রস্তত করে অনুমোদনের পর তাদের নামে কার্ড ইস্যু করা হয়। ওই কার্ডের মাধ্যমে বছরের পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন উপজেলা কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হওয়া ডিলারদের কাছ থেকে। সে মোতাবেক সাত বছরে প্রতারিত ১২ ব্যক্তির ৩১৫ মণ চাল ডিলারের পেটে গেছে।
গত আগস্ট মাস থেকে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ডিজিটাল ডাটাবেজ’ প্রস্তুত শুরু করে খাদ্য বিভাগ। তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সুবিধাভোগীদের ছবিসহ তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এদিকে সুবিধাভোগী কার্ডধারীদের তথ্য সংগ্রহের সময় কাচারী কোয়ালীপাড়ার আট নম্বর ওয়ার্ডের ১২ জন ব্যক্তি জানতে পেরেছেন তারা ২০১৬ সাল থেকে তালিকাভুক্ত। তাদের নামে বরাদ্দ চাল সাত বছর ধরে উত্তোলন করে আসছেন ডিলার নিজেই।
বিষয়টি তারা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান এবং প্রতিকার চান। তারা অভিযোগ করেন, ইউনিয়নের নিয়োগ পাওয়া পরিবেশক নিত্যানন্দ মন্ডল চালগুলো আত্মসাৎ করেছেন।
কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের অনিক কুমার, আজাদ হোসেন, আবদুল মান্নান, ইভা রানী ও সুষমা রাণী জানান, তারা যে কর্মসূচির সুবিধাভোগী তা জানতেন না। কোনো দিন চালও কেনেননি ডিলারের কাছ থেকে। তাদের কোনো কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। অথচ তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে রীতিমত চাল আত্মসাৎ করেছেন ডিলার।
মিনতি রাণী বলেন, তিনি কার্ডের জন্য চেয়ারম্যান, সদস্য ও ডিলারের কাছে ধর্না দিয়েও তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। অথচ নতুনভাবে আবেদন করতে গিয়ে জানতে পেরেছেন তিনি সাত বছর ধরে এই সুবিধাভোগী। তিনি এজন্য ডিলারকে দায়ী করে তার বিচারের দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকার ১৮৩ নম্বরে নাম থাকা কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্য মিঠুন কুমার বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে চাকরির সুবাদে এলাকার বাইরে আছেন। তিনি বা পরিবারের কোনো সদস্য কখনো চাল কিনেন না।
তবে ডিলার তার অত্মীয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের একজন ওষুধ ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, তার নামও তালিকায় দেখে অবাক হয়েছেন। তার নামে সাত বছর ধরে চাল তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত ডিলারের আওতায় থাকা ৪৫০ জনের তালিকা ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যাপক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। ব্যবসায়ী, ধনী ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো। এর মধ্যে ডিলার নিজের নামও সুবিধাভোগীর তালিকাভুক্ত করেছেন (তালিকা নম্বর ৯৩)। অথচ তিনি ও তার স্ত্রী চাকরিজীবী। দুইজনেই পেশায় স্কুলশিক্ষক।
কাচারী কোয়ালীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৪০ জন সুবিধাভোগীর নাম তালিকাভুক্ত করে নামের বরাদ্দ চাল আত্মসাতের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কাচারী কোয়ালীপাড়া গ্রামের ১২ জনের বিষয় স্থানীয় ও প্রতারিতরা নিশ্চিত করেছেন। এর বিচার হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অভিযুক্ত পরিবেশক (ডিলার) নিত্যানন্দ মন্ডল তিন জনের নামে বরাদ্দ চাল আত্মসাৎ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। সাবেক একজন চেয়ারম্যানের প্ররোচনায় এই অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।