রুপালি ইলিশে সোনা ফলছে, দিনে বিক্রি শতকোটি
প্রকাশিত : ০৫:১৫ এএম, ৬ অক্টোবর ২০২২ বৃহস্পতিবার
রুপালি-ইলিশে-সোনা-ফলছে-দিনে-বিক্রি-শতকোটি
লক্ষ্মীপুরের অন্যতম মাছ ঘাটের মধ্যে রয়েছে- সদরের উপকূল সংলগ্ন মজুচৌধুরী হাট, বুড়ির ঘাট, চররমনী মোহন এলাকা, রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত রামগতি মাছ ঘাট, টাংকী মাছ ঘাট, আলেকজান্ডার মাছ ঘাট এবং শেখ রাসেল ব্রিজ ঘাট। কমলনগরে উপজেলার মতিরহাট, বাত্তিরখাল, কটোরিয়া, লুধুয়া, মাতাব্বরহাটের মাছ ঘাট ও রায়পুরের বেশ কয়েকটি মাছ ঘাট এখন সরগরম। বর্তমানে ঘাটগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমে উঠেছে ইলিশের বেচাকেনা।
জানা গেছে, রামগতি উপজেলার মধ্যে প্রধান চারটি মাছ ঘাটের মধ্যে টাংকী ঘাটের অবস্থান প্রথমে। এছাড়া অন্যান্য ঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান। এর ফলে ঘাটগুলোর পাশেই গড়ে উঠেছে বরফ কল এবং মাছের আড়ত।
ব্রিজ ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, এখন প্রতিটি এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ এক হাজার ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় কেনা যাচ্ছে।
টাংকী ঘাটের আড়তদার ফরিদ ব্যাপারী বলেন, প্রতিদিন এ ঘাটে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার ইলিশ বেচাকেনা হয়। গত দুইদিন ধরে মোট ৫০ লাখ টাকার মাছ কিনেছি। আমরা শতকরা ১০ টাকা হারে জেলেদের কাছ থেকে কমিশন নিচ্ছি। এ ঘাটকে ঘিরে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
আলেকজান্ডার মাছ ঘাটের আরেক আড়তদার হাজি নেছার আলী জানান, কিছুদিন পর নদীতে অভিযান শুরু হওয়ায় অনেকে বাসাবাড়ির জন্যও এ ঘাট থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। ফলে ঘাটটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে।
স্থানীয় মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, কমলনগর উপজেলায় পাইকারি মাছ ঘাটগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ টন ইলিশ আমদানি হচ্ছে। এখন ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে, এক কেজি থেকে এক কেজি ৪০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার ৩০০ টাকা। আর এক কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরে।
এর ফলে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ১৫ দিন মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে মেঘনায় ইলিশসহ সব প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চল মেঘনায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে করে উপজেলার মাছ ঘাটে বেড়েছে ইলিশের আমদানি। সেইসঙ্গে দামও ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে রয়েছে।
কমলনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নিম্নচাপের প্রভাব, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় পাইকারি বাজারগুলোতে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। দামও ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।
রামগতির সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন পর বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়েছে। রামগতির মাছ ঘাটগুলোতে বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলেরা। বর্তমানে সাগরে প্রচুর ইলিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ছে। ঘাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায়।
ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য। মৎস্য বিভাগ বলছেন, বৈরী আবহাওয়া ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে ইলিশের আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ঘাটে প্রতিদিন প্রায় শতকোটি টাকার ইলিশ বেচাকেনা হয়। জনসচেতনতা এবং সরকারের বিধি-নিষেধ মানার কারণে মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। সামনে ইলিশের প্রজনন সময়ে সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে চললে আরো বেশি ইলিশ ধরা পড়বে।