সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের নামে অশ্লীলতা, দেড় বছরে ১০৮ কোটি টাকা হাতিয়েছে বিগো
প্রকাশিত : ০৭:১০ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২২ বুধবার
সফটওয়্যার-ডেভেলপমেন্টের-নামে-অশ্লীলতা-দেড়-বছরে-১০৮-কোটি-টাকা-হাতিয়েছে-বিগো
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা একটি মামলার তদন্তে নেমে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যপ্রমাণ পায় সিআইডি।
এরপর বিগো টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চীনা নাগরিক ইয়াও জিসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলা করেছে সিআইডি। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিগো বাংলা লিমিটেড, বিগো বাংলার কর্মী এস এম নাজমুল হক, আরিফ হোসেন, মনসুন হোল্ডিং নামের প্রতিষ্ঠান।
সিআইডির করা দ্বিতীয় মামলায় চীন নাগরিক ও বিগোর এমডি ইয়াও জির বিরুদ্ধে ৭৯ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
সিআইডি বলছে, পাচারের উদ্দেশ্যে এ অর্থ সংগ্রহে বিগো টেকনোলজিকে সহযোগিতা করেছে মনসুন হোল্ডিং লিমিটেড। মূলত মনসুন হোল্ডিংয়ের নামে নেয়া পেমেন্ট গেটওয়ে ‘সূর্য পে’র সাহায্য নিয়ে বিপুল এ অর্থ আত্মসাৎ করে বিগো টেকনোলজি।
জানা গেছে, বিগো অ্যাপে লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে গত বছরের জুনে চীনা নাগরিক ইয়াও জিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। ঐ মামলার অন্য চার আসামি হলেন- বিগো বাংলার কর্মী মোস্তাফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এস এম নাজমুল হক ও আসমা উল হুসনা সেজুতী। তারা সবাই এখন কারাগারে।
এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা দিলেও বিগো লাইভ মূলত লাইভ চ্যাট ও ভিডিও চ্যাটভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। কিছুদিন পরই প্রতিষ্ঠানটি ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও বিনস বিক্রির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় বিগো ও লাইকির অ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ। এক্ষেত্রে এমএফএস, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের পর সবশেষে ‘সূর্য পে’ নামে পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে দেড় বছরে তারা হাতিয়ে নেয় ১০৮ কোটি টাকা।
রাজধানীর পল্টন থানার পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার তদন্তে নেমে অর্থ আত্মসাৎ ও পরবর্তীসময়ে সেই অর্থ সিঙ্গাপুরে সরিয়ে নেয়ার তথ্য পায় পুলিশ। পরে মামলাটি তদন্ত শুরু করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পরিকল্পিতভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও বিনস বিক্রির বিপরীতে অ্যাপটির বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে এক কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৮০৬ টাকা আয় করে বিগো লাইভ টেকনোলজি। এ অর্থ জমা হয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের গাজীপুর শাখার হিসাব নম্বরে, যা বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে।
ঐ ব্যাংক হিসাবে স্থিতি রয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৪৭০ টাকা। বাকি এক কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৬ টাকা বিনস রিসেলার নাজমুল হক দেন চীনা নাগরিক ইয়াও জিকে। একই সময়ের মধ্যে আরো দুটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাবের মাধ্যমে বিগো বাংলা লিমিটেড ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার ৭৬ টাকা সংগ্রহ করে।
এছাড়া ডায়মন্ড ও বিনস রিসেলার এস এম নাজমুল হকের ১২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৪৭ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৮১২ টাকা সংগ্রহ করে বিগো বাংলা লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিকে ‘সূর্য পে’ তাদের গেটওয়ে সেবা সরবরাহ করেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সোহেল রানা।
তিনি বলেন, ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে পেমেন্ট গেটওয়ে সুবিধাও নেয় বিগো বাংলা লিমিটেড। এক্ষেত্রে তাদের ‘সূর্য পে’ নামে সূর্যমুখী লিমিটেডের পেমেন্ট গেটওয়ে পাইয়ে দেয় দেশি প্রতিষ্ঠান মনসুন হোল্ডিং লিমিটেড। তারা মূলত নিজেদের নামে পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস নিয়ে সেটি বিগো বাংলা লিমিটেডকে ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে সহযোগী হয়ে উঠেছে মনসুন হোল্ডিং লিমিটেড।