দুই লাখ টাকার মিষ্টি খেয়েছে জিন!
প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ৫ অক্টোবর ২০২২ বুধবার
দুই-লাখ-টাকার-মিষ্টি-খেয়েছে-জিন
ভুক্তভোগী পুত্রবধূ মুক্তা বেগম জানান, ঘটনার শুরু গত মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাত ১টায়। ঐ সময় হঠাৎ একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে মুক্তার নাম্বারে। ঐ নাম্বারের অপর প্রান্ত থেকে লম্বা সালাম দিয়ে বলে আমরা বাতাসের তৈরি, জিন জাতি। ভাগ্যবতী নারী তুই, যার জন্যই তোকে ফোন করা হয়েছে। তোদের আর কিছু করতে হবে না, সারাজীবন বসে বসে খেতে পারবি। অপরপ্রান্তের এমন কথা শুনে মোবাইল নিয়ে মুক্তা ছুটে যান তার শাশুড়ি বিবি হনুফার কাছে। এরপর ওই কথিত জিন কথা শুরু করে তার সঙ্গে। এরপর তাকে ইসলামী বিভিন্ন কথা শুনিয়ে হনুফার বিশ্বাস অর্জন করে।
মুক্তা বেগম আরো জানান, এরপর প্রতিদিন রাতেই ফোন করে কথা বলতে থেকে ওই কথিত জিন। এক পর্যায়ে তাদেরকে হাড়ি ভর্তি স্বর্ণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। এরপর তারা কথিত ঐ জিনের ফাঁদে পড়ে। কথিত জিন এক সময় বলে এসব স্বর্ণ পেতে হলে তাদের সঙ্গে ১৭ হাজার ৯শত ৯৯ জন জিনকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে। এ মিষ্টি খাওয়াতে এসব জিনদের টাকা দিতে হবে। লোভে পড়ে জিনদের জন্য টাকা পাঠানো শুরু করে মুক্তা বেগম ও তার শাশুড়ি।
মুক্তার শাশুড়ি বিবি হনুফা বলেন, আমাদের সঙ্গে ০১৬৩২৮২২৯২৮ ও ০১৩১২৭১১৫৮২ এই দুইটি নাম্বার দিয়ে এমন করে কথা বলেছে, যা বিশ্বাস না করার কোনো উপায় নেই। তারা স্বর্ণ রাখার জন্য আমাদের দিয়ে পাতিল ও নতুন হলুদ কাপড় কিনিয়েছে। তারা বলেছে ওই পাতিলটি হলুদ কাপড় দিয়ে ডেকে রাখতে, যেকোনো সময় স্বর্ণে ভরে যাবে পাতিলটি। এছাড়া কথিত জিন বলেছে, এসব কথা যদি আমরা কাউকে বলি তাহলে আমাদের স্বামী ও বাচ্চা মারা যাবে এবং অনেক বড় ক্ষতি হবে। তাই আমরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে তাদের কথা মতো ঋণ, ধার-দেনা করে টাকা দেওয়া শুরু করি। জিন আমাদের থেকে মিষ্টি খাওয়া ও বিভিন্ন খরচসহ মোট দুই লাখ টাকা দাবি করে। আমরা কাউকে না জানিয়ে দুইটি বিকাশ নাম্বারে মোট ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেই। সবশেষ গত ২ অক্টোবর (রোববার) আমার মেজ ছেলেকে দিয়ে টাকা পাঠাতে গেলে সে বিষয়টি সন্দেহ করে। এরপর আমরা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এতে করে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
বিবি হনুফার মেজ ছেলে মো. নাদিম বলেন, আমাদের কাউকে না জানিয়েই আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কথিত জিনের ফাঁদে পড়ে টাকা দিয়েছে। আমাকে দিয়েও টাকা পাঠাতে চেয়েছে তারা। তবে বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। এরপর মানুষের সঙ্গে কথা বলে বুঝতি পারি আসলে জিন নয়, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পড়ে পড়েছে আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।
এদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ঐ এলাকায় চলছে ব্যাপক তোলপাড়। এসব নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে লালমোহন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. এনায়েত হোসেন বলেন, এমন কোনো ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।