বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মেঘনায় ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

প্রকাশিত : ১১:১৫ পিএম, ৪ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার

মেঘনায়-ধরা-পড়ছে-ঝাঁকে-ঝাঁকে-ইলিশ

মেঘনায়-ধরা-পড়ছে-ঝাঁকে-ঝাঁকে-ইলিশ

ইলিশের ভরা মৌসুমেও দীর্ঘসময় ইলিশ না পাওয়া হাতশায় ভুগছিলেন জেলেরা। বৃষ্টি না থাকায় ও তীব্র স্রোতের কারণে মেঘনা নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি তখন। তবে গত কয়েক দিনে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে নদীতে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালী ইলিশ। এতে জেলেদের মুখে হাঁসি ফুটেছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো মাছ ঘাট ও আড়ত এলাকা। হাঁকডাক দিয়ে চলছে বেচাকেনা। প্রতিদিন বিভিন্ন মাছ ঘাটে ইলিশ বেচাকেনা হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা।

লক্ষ্মীপুর সদরের উপকূল সংলগ্ন মজুচৌধুরী হাট, বুড়ির ঘাট, চররমনী মোহন এলাকায়, রামগতি উপজেলার মেঘনা নদীসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত রামগতি মাছঘাট, টাংকী মাছঘাট, আলেকজান্ডার মাছঘাট ও শেখ রাসেল ব্রিজ ঘাট। 

কমলনগরে উপজেলার মতিরহাট, বাত্তিরখাল, কটোরিয়া, লুধুয়া, মাতাব্বরহাটের মাছঘাট ও রায়পুরের বেশ কয়েকটি মাছঘাট এখন সরগরম। বর্তমানে ঘাটগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমে উঠেছে ইলিশের বেচাবিক্রি। ফলে স্থানীয় বাজার এলাকাগুলোতে এখন জমজমাট অবস্থা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, রামগতি উপজেলার মধ্যে প্রধান চারটি মাছঘাটের মধ্যে টাংকী ঘাটের অবস্থান প্রথমে। এ ছাড়া অন্যান্য ঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে নিয়ে যান। এ কারণে ঘাটগুলোর পাশেই গড়ে উঠেছে বরফকল এবং মাছের আড়ত।

ব্রিজঘাটের মাছ ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মেঘনা নদীতে আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না বলে ঘাটে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে ইলিশ ধরা পড়লে এই ঘাট আরো বেশি জমজমাট থাকত। এখন প্রতিটি এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। 

টাংকী ঘাটের আড়তদার ফরিদ ব্যাপারী বলেন, প্রতিদিন এই ঘাটে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার ইলিশ বেচাকেনা হয়। গত দুই দিন ধরে মোট ৫০ লাখ টাকার মাছ কিনেছি। আমরা শতকরা ১০ টাকা হারে জেলেদের কাছ থেকে কমিশন নিচ্ছি। এই ঘাটকে ঘিরে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে অভিযান শুরুর আগমুহূর্তে ধুম বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।

আলেকজান্ডার মাছঘাটের আরেক আড়তদার হাজি নেছার আলী জানান, কিছুদিন পর নদীতে অভিযান শুরু হওয়ায় অনেকে বাসাবাড়ির জন্যও এই ঘাট থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। ফলে ঘাটটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে।

জানা যায়, কমলনগর উপজেলায় পাইকারি মাছ ঘাটগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ টন ইলিশ আমদানি হচ্ছে। এখন ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে, এক কেজি থেকে এক কেজি ৪০০ গ্রামের ইলিশ এক হাজার ৩০০ টাকা, আর এক কেজি ৫০০ গ্রাম থেকে দু’কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭০০ থেকে দু’হাজার টাকা কেজি দরে। ফলে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর কয়েক দিন পর ৭ অক্টোবর থেকে ১৫ দিন মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে মেঘনায় ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চল মেঘনায় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে করে উপজেলার মাছ ঘাটে বেড়েছে ইলিশের আমদানি। সেই সাথে দামও ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে রয়েছে।

বিভিন্ন ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, নদীতে শত শত নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেরা নেমে পড়েছে ইলিশ শিকারে। কারো যেন বসে থাকার সময় নেই। কেউ আবার জাল বুনছেন নৌকাতে বসে। ঘাটগুলোতে পাইকার আড়ৎদার ও জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ইলিশ কেনা-বেচা করছেন, কেউ বরফ দিচ্ছেন, কেউ বা ব্যস্ত মাছ প্যাকেট করা নিয়ে। মৎস্যজীবীদের হাঁক-ডাকে মুখরিত আড়ৎগুলো। দীর্ঘ দিন পর সরগরম হয়ে উঠেছে আড়ৎগুলো। উপজেলার ছোট বড় সবগুলো হাটবাজারে এখন রুপালি ইলিশের দেখা মিলছে। জেলে নুর মোহাম্মদ, ছেরু ব্যাপারী, আক্তার মাঝি, সালাউদ্দিন মাঝি ও হারুন মাঝি জানান, অনেক দিন পর নদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে তারা বেশ খুশি।

কমলনগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নিম্নচাপের প্রভাব, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল ও মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় পাইকারি বাজারগুলোতে ইলিশের আমদানি বেড়েছে, সেই সঙ্গে দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।

রামগতি সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন পর বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়েছে। রামগতির মাছঘাটগুলোতে বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলেরা। বর্তমানে সাগরে প্রচুর ইলিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ছে। ঘাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায়। শেষ মুহূর্তে এসে ইলিশ ধরা পড়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে জেলেরা। 

তিনি আরো বলেন, চলতি মাসে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আসবে, তাই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। তবুও আগের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন জেলেরা। মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা, কেনাবেচা, মজুতকরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ জন্যই আর কয়েক দিন পর থেকে নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞা শুরু আগে জেলেরা খুব ব্যস্ত। বর্তমানে ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দামও রয়েছে নাগালের মধ্যে। ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য। 

মৎস্য বিভাগ বলছেন, বৈরী আবহাওয়া ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে ইলিশের আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।