জমি লিখে নিয়ে মাকে বাড়ি ছাড়া
প্রকাশিত : ১২:১৫ পিএম, ৩ অক্টোবর ২০২২ সোমবার
জমি-লিখে-নিয়ে-মাকে-বাড়ি-ছাড়া
পনের বছর আগে স্বামী আনসার আলী মারা যান। মৃত্যুর পর স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ ছিল তার শেষ ভরসা। সেই শেষ ভরসার সম্পদই বৃদ্ধ বয়সে রহিমনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর সৎ সন্তান আফাজ উদ্দিন ও নাতি মোস্তফা তার অংশের জমি লিখে নিয়েছে বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল করার কথা বলে। কিন্তু দেখভাল তো দূরের কথা ৬ মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তার সৎ ছেলে ও নাতি। প্রতিবেশীরা রহিমনকে আশ্রয় দিয়েছিল, কিন্তু আশ্রয়দাতাকে হুমকি দেয়ার প্রতিবেশীরাও এখন আর তাকে ঠাঁই দিচ্ছে না।
এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউপির বালিয়াপাড়া গ্রামে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে মনুষ্যত্ববিহীন বাবা-ছেলে কর্মকাণ্ড দেখলেও তাদের কাছে অসহায় তারা। ৭০ বছর বয়সী রইমন বিবি উপজেলার বরমী ইউপির বালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী। তিনি তার সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও মোস্তফা কামাল এর বিরুদ্ধে জমি লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।
ভুক্তভোগী রইমন বিবি জানান, স্বামী যখন তাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন তখন ওই সন্তানরা অনেক ছোট। তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় আগের ঘরের এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিজ সন্তানের মতো করে বড় করেছেন। কিন্তু শেষ বয়সে তার সঙ্গে এমন আচরণ করবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতি মোস্তফা বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর এখন তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।
রোববার রাতে বরমী ইউপির বালিয়াপাড়া গ্রামের সাহিদের দোকানের সামনে গিয়ে কথা হয় রহিমনের সঙ্গে। এ সময় তার চোখ থেকে পানি ঝড়ছিল। এদিকে, গণমাধ্যম কর্মীদের আসার খবরে সেখানে ভিড় জমান প্রায় ৩০-৪০ জন গ্রামবাসী। তাদের একজন ইসমাইল।
তিনি জানান, সম্প্রতি রহিমনকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর উদ্যোগ নেন সৎ ছেলে আফাজ। এ নিয়ে তারা বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হলে কোভিড সনদ থাকতে হবে। তাই শনিবার আরেক নাতনি শারজিন রিকশা যোগে কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলে তাদের সন্দেহ হয়।
তিনি আরো বলেন, টিকা দেয়ার কথা বলে রহিমনকে অন্য কোথাও ছেড়ে আসতে পারে তারা। তাই আমরা বাধা দিয়েছি। এ নিয়ে ছেলে আফাজের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডা হয়েছে।
বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর দীর্ঘদিন ছিলেন পার্শ্ববর্তী সাহেরা খাতুনের আশ্রয়ে। সাহেরা খাতুন জানান, রহিমনকে আশ্রয় দেয়ার কারণে প্রায় তার সৎ ছেলের পরিবারের লোকজন নানা ধরণের বিদ্রুপ কথাবার্তা বলতো। আমার স্বামী নেই, তাই রহিমন খালাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, সেখানেও তার ছেলে-নাতি তাকে আশ্রয় না দিতে নারা ধরণের পরামর্শ দিতো।
বরমী ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন মাস্টার বলেন, জমিজমা ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। ইউপি সদস্য থাকাকালীন বিষয়টি একাধিকবার সমাধান করেছিলাম। এখন কি অবস্থায় আছে তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে বরমী ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে রহিমনকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।
শ্রীপুরের ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া খুবই অমানবিক। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জেনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বৃদ্ধাকে সরকারি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।