বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খুশিয়া বেগম বাঁচতে চান 

প্রকাশিত : ১০:১৫ পিএম, ২ অক্টোবর ২০২২ রোববার

খুশিয়া-বেগম-বাঁচতে-চান 

খুশিয়া-বেগম-বাঁচতে-চান 

‘২০০৮ সালে পিঠে ট্যামের মতো দেখায়, শারীরিক শক্তি এবং কাজের ক্ষমতাও কমতে থাকে। তখন শিশু সন্তান ও আমাকে ফেলে চলে যায় স্বামী। ধীরে ধীরে ট্যামটিও বড় টিউমারের রূপ নেয়। অনেক কষ্টে টাকা জোগার করে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশালে ডাক্তার দেখিয়ে টিউমার অপারেশন করাই। সেখান থেকে আবারো টিউমার ওঠে। এভাবে একে একে ৩ বার অপারেশন করানো হলেও সেখান থেকে এখন পানি বের হচ্ছে।’ 

‘পিঠের অন্যান্য জায়গা থেকে আরো বড় বড় কয়েকটি টিউমার ওঠে। চিত হয়ে ঘুমাতে পারি না। রোদ ওঠলে টিউমারের ভেতরে এমনভাবে জ্বালাপোড়া করে তখন মনে হয় কেউ যেন পিঠে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। বৃদ্ধা মা, ১৩ বছরের কন্যা সন্তান আর আমি ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছি, এর চেয়ে মরে যাওয়াও অনেক ভালো।’

এভাবেই চরম কষ্টের কথা জানান খুশিয়া বেগম। রাজাপুর উপজেলার কানুদাসকাঠি গ্রামের মৃত. সফিজউদ্দিন হাওলাদার মেয়ে তিনি। 

বৃদ্ধা মা, খুশিয়া বেগম ও তার মেয়ে

খুশিয়া বেগম জানান, ২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। এরপর থেকেই আমার শরীরে রোগ দেখা দেয়। সবসময় জ্বর লেগেই থাকতো। পরের বছর পিঠে একটি ট্যামের মতো দেখা যায়। আস্তে আস্তে  সেটি বড় আকার ধারণ করে। কয়েক জায়গায় ডাক্তার দেখিয়ে প্রথমে বরিশালে অপারেশন করাই। কয়েক মাসের মধ্যে আবার জেগে ওঠে। খুলনা ২৫০ বেডের হাসপাতালে অপারেশন করাই। এরপরে ঢাকায় গিয়ে মহাখালীতে ডাক্তার দেখালে একের পর এক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেয়। যে কয় টাকা নিয়ে গেছিলাম তা পরীক্ষা করাতেই শেষ করে ফেলছি। প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয় তাতে। টাকার অভাবে বাড়িতে চলে এসে বরিশালে সার্জারিতে ভর্তি হই। সেখানের ডাক্তার ক্যান্সার বিভাগে পাঠালে টাকা না থাকায় জটিল রোগের চিকিৎসার খরচের ভয়ে চলে আসি। আমার আর ডাক্তার দেখানোর সামথ্য নেই, আল্লাহকে ডাকবো আল্লাহ যা করে।’ 

তিনি আরো জানান, বাবা-ভাই অনেক আগেই মারা গেছেন। নেই কোনো অর্থ সম্পদও। আমার বৃদ্ধা মা, শিশু কন্যাকে কখনো খেতে দিতে পারি আবার কখনো না খেয়ে থাকি। অনেক কষ্টে আমাদের কাটে। টিউমারের মধ্যে আগুনের তাপের মতো অনেক জ্বালা যন্ত্রণা হয়। টিউমারের ভেতরে এতো প্রচুর গরম যাতে পিঠ জলা করে ফ্যানের নিচে বসে থাকতে হয়। আগের অপারেশনের জায়গা থেকে পানি ঝরতেছে। আমাকে দেখার কোনো লোক নেই। একাই এ রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছি। যে ঘরে বসবাস করছি তা থেকে পানি পড়ে। বাবার ঘর, কতদিন এখানে থেকে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করবো। এখন আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আল্লাহ আমাকে মৃত্যু দিলেও এতো কষ্ট আর সহ্য করতে হতো না। 

খুশিয়ার কন্যা হাসি আক্তার জানায়, সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার মায়ের অসুস্থতার কারণে লেখাপড়াও সঠিক হচ্ছে না। মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য কোন টাকা পয়সার জোগার নেই। অনেকদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। না পারে ঘুমাতে আর না পারে খেতে। বাবাও খোঁজ খবর নেয় না। বাবাকে ফোন দিলেও অনেক গালি দেয়। বাড়িতে গেলেও মারধর করে বাবা তাড়িয়ে দেয়। এখন আমরা কিভাবে বাঁচবো ? 

বৃদ্ধা মা তাহমিনা বেগম আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘মোর মাইয়াডা অসুস্থ। পিডে টিউমার হয়ে এহোন হাঙ্গা পিডে ছড়াইয়া গেছে। একফির হইরা তিনফির অপারেশন করছি, হারে নায়। এহোন কি হরমু আর কিভাবে চলমু, আল্লারাস্তে হালাইয়া থুইছি। মোর সংসারেও আর কেউ নাই, একটা লায়েক পোলা হেডাও মইরা গেছে। এহোন মোরা মানসের কাছে চাইয়া চিন্তা খাই। হাঙ্গা পিডে টিউমার লইয়া কোনহানে যাইতেও পারে না, আর কোন কামও হরতে পারে না। এ অবস্থা দেইখা ওর স্বামীও নেয় না, হালাইয়া থুইছে। মাইয়া একটা আছে, লেহা পড়া করাইতে পারি না, ভাতও  দেতে পারি না, খাওয়াইতেও পারি না।’ 

স্থানীয় ওবায়দুল হক আকন জানান, আমরা দেখতেছি খুশিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। যেভাবেই হোক খরচ করে বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখাইছে। স্বামী চলে যাওয়ায় তিনি পরিত্যক্তা। তিনি খুবই অসহায়, বৃদ্ধ মা ঘরে, তার একটা মেয়ে আছে, তারও লেখাপড়া চালাতে পারে না। তিন বেলা ঠিকমতো খাবারও খেতে পারে না। দরিদ্র পরিবারে হওয়ায় তারা খুবই অসহায় অবস্থায় আছে। 

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. শিহাব উদ্দিন জানান, খুশিয়ার পিঠের টিউমার সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া রোগ নির্ণয় করা সম্ভব না। মহাখালি থেকে বা বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা করানোর পর পরবর্তী চিকিৎসার পরিকল্পনা করা সম্ভব। দরিদ্র পরিবারের ব্যায়বহুল পরীক্ষায় কোনো স্বহৃদয়বান ব্যক্তির হস্তক্ষেপ হলে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারতেন।