মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতীয় কোম্পানির ওপর প্রথমবারের মতো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত : ০৪:৫০ পিএম, ২ অক্টোবর ২০২২ রোববার

ভারতীয়-কোম্পানির-ওপর-প্রথমবারের-মতো-মার্কিন-নিষেধাজ্ঞা

ভারতীয়-কোম্পানির-ওপর-প্রথমবারের-মতো-মার্কিন-নিষেধাজ্ঞা

ভারতের মুম্বাইভিত্তিক টিবালাজি পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের সঙ্গে জ্বালানি তেলের ব্যবসা থাকার অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রথম ভারতীয় কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, কোম্পানিটি ‘চীনে অব্যাহত চালান পাঠানোর’ অংশ হিসেবে লাখো ডলার মূল্যের জ্বালানি তেল কিনেছে।

ইরানের তেল ও তেলজাত পণ্য বিক্রি সীমিত করতে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা এক বিবৃতিতে আগেই জানিয়েছিলেন দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ব্রায়ান নেলসন। কারণ কয়েক মাস ধরে আলোচনা সত্ত্বেও তেহরান এখনো ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি কার্যকর করেনি। এরই ধারাবাহিকতায় ইরানের জ্বালানি তেল ও তেলজাত রাসায়নিক রফতানি বন্ধ করতে বৃহস্পতিবারই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। এমনকি ইরানের তেল ও তেলজাত পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি কোম্পানিকেও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

সম্প্রতি ১১ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সফরের শেষ দিন জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করে জ্বালানির ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাকের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দেশে ফিরতে না ফিরতেই ভারতকে দেয়া হোয়াইট হাউজের ‘লাল সংকেত’ দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তার প্রশ্নে একপ্রকার কুঠারাঘাত বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। জয়শঙ্করের সফরের সময় প্রসঙ্গটি না তুলে তিনি ভারতে ফেরার পরই কেন এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে ভারত।

এনডিটিভি’র প্রতিবেদন বলছে, ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর এবং চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে দুই দেশের যোগাযোগ বাড়াতে ভারত সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সম্প্রতি উজবেকিস্তানের সমরখন্দে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনেও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এসব কিছুর ওপরই নজর রাখছিল যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ভারত সরকার বলছে, তেহরানের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলেছে দিল্লি। সেই সঙ্গে তাদের কোম্পানিগুলো ইরান থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করা থেকে বিরত রয়েছে।

এদিকে ইউক্রেনে রুশ বাহিনী হামলা করার দুই সপ্তাহ পরই রাশিয়ার জ্বালানি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় জ্বালানি তেল কেনে ভারত। তখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কটাক্ষের মুখে পড়লেও সে সমালোচনা গায়ে মাখেনি দিল্লি। বাইডেন প্রশাসন তখন হুঁশিয়ারি দেয়, রাশিয়াকে যারা আজ সমর্থন করছে ইতিহাসই তাদের একদিন বিচার করবে। তবে হুঁশিয়ারি পর্যন্তই, তলে তলে ভারতকে সবুজসংকেত দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ইউরোপের বহু দেশও রুশ জ্বালানি তেল আমদানি করে। তাই ওই সময় ছাড়া পেলেও ইরানের বেলায় আর ছাড়া দেয়া হয়নি। তবে ইরানকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা কাজে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

কেননা ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুক্তি প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা বহালের সিদ্ধান্তের পরও দেশটির তেল রফতানি প্রতি বছরই বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রভাব ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকার পরও ইরানের তেল বিক্রির হার কেবল ওপরেই উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির দাবি, কর্মসূচির আড়ালে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এ ইস্যুতে জাতিসংঘের পাশাপাশি তেহরানের ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন। যার ফলে ইরানের অর্থনীতি নাজুক আকার ধারণ করে এবং একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসতেও সম্মত হয়। এর ধারাবাহিকতায় পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তি নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আর সেটি হয়েছিল ইরানের সঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া এবং ‘পি-ফাইভ প্লাস ওয়ান’ হিসেবে পরিচিত জার্মানির। 

চুক্তি অনুসারে তেহরান তাদের কিছু পরমাণু স্থাপনা বন্ধ কিংবা পরিবর্তন করতে সম্মত হয়। এছাড়া ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের অনুমতিও দেয়া হয়। বিনিময়ে ইরানের ওপর আরোপিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। বাদ সাধেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় আসার বছরখানেক পরই ২০১৮ সালে ওই পরমাণু চুক্তিকে ‘সবচেয়ে বাজে চুক্তি’ অভিহিত করে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। একই সঙ্গে ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পাল্টা জবাব হিসেবে চুক্তির শর্ত মানা বন্ধ করে দেয় ইরান। চুক্তিতে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিচ্ছে দেশটির সরকার। এদিকে ট্রাম্পকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসার পর ফের চুক্তিতে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর চূড়ান্ত খসড়া চুক্তি তৈরি হয়েছে। তবে সম্প্রতি উভয় পক্ষের দরকষাকষিতে আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে। এর মধ্যেই তেহরানের ওপর আবারো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল ওয়াশিংটন।