শীতলক্ষ্যার ঘাটে বর্জ্যের স্তুপ
প্রকাশিত : ১১:১৫ পিএম, ১ অক্টোবর ২০২২ শনিবার
শীতলক্ষ্যার-ঘাটে-বর্জ্যের-স্তুপ
জানা গেছে, শ্রীপুরের নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র বরমী বাজার। প্রাচীনতম এ বাজার ঘিরে যেমন গড়ে উঠেছে দোকানপাট, তেমনই বাজারের সরকারি জায়গা দখল করে অবাধে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন, যেখানে বাস করে হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের দোকানপাট ও বাসা-বাড়ির গৃহস্থালী বর্জ্য, বিভিন্ন ক্লিনিকের মেডিকেল বর্জ্যসহ নানা ধরনের বর্জ্য শীতলক্ষ্যার তীরে নৌঘাট ঘেঁষে ফেলা হচ্ছে। এতে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়।
বর্জ্যের কারণে নদীর পানিরও দূষণ বেড়েছে কয়েকগুণ। ভাগাড় তৈরির কারণে সরকারিভাবে নির্মিত নৌঘাটের ব্যবহার দিন দিন সীমিত হয়ে পড়ছে। এই নৌঘাটে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধশত নৌযান চলাচল করে। এতে পণ্য আনা নেয়াসহ কয়েক হাজার যাত্রী এই নৌপথ ব্যবহার করে। এছাড়াও প্রতি বুধবারের হাটে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় কয়েকগুণ।
বরমী নৌঘাটের ইজারাদার তৌফিক মিয়া বলেন, নৌযাত্রীদের কথা বিবেচনায় সরকার অনেক টাকা খরচ করে তিনটি ঘাট নির্মাণ করেছে। শৌচাগার, যাত্রী ছাউনিও তৈরি করে দিয়েছে। তবে মূল সমস্যা হচ্ছে বর্জ্য ঘিরেই। পঁচা, মরা প্রাণী ও নানাপ্রকার প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর বস্তু নৌঘাট ঘিরে ফেলায় এখন তা স্তুপে পরিণত হয়েছে। উৎকট দুর্গন্ধে এই ঘাটে টেকা দায় হয়ে পরেছে। তবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ বর্জ্য এখান থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানান তিনি।
বরমী ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার জানান, তার বাড়ি কাপাসিয়ার রায়ত এলাকায়। প্রতিদিন তাকে নদীর ঘাট ব্যবহার করতে হয়। এখানে যাওয়া আসার সময় বর্জ্যের দুর্গন্ধে নাক চেপে পারাপার হতে হয় তাকে।
হারিয়াদী এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, বর্জ্যের কারণে এ নৌঘাটটি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন দিন এটি মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বর্জ্য নদীর পানির সঙ্গে মিশে দূষণও হচ্ছে। আগে স্থানীয়রা শীতলক্ষ্যা নদীতে গোসল ও মাছ ধরলেও এখন বাজারের আশপাশে দূষণের কারণে পানিতে কেউ নামে না।
বরমী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম সরকার বলেন, আশপাশে কোথাও ময়লা আবর্জনা রাখার স্থান না থাকায় বহুদিন ধরেই স্থানীয়দের উদ্যোগে বর্জ্য নদীর পাশেই ফেলা হচ্ছে। আমরা কয়েকবার সতর্ক করলেও কেউ শুনছেন না। রাতের অন্ধকারে আড়ালে এ ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। তবে এবার তারা নদীর তীর পরিস্কার করে স্থানটি পরিস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, এভাবে নদীর মধ্যে বর্জ্য ফেলার ঘটনা আইন অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধ। জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় এ বিষয়টি তোলা হলেও কেউ নজর দেননি। স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষযে সচেতন হতে হবে। আর নৌঘাট ঘিরে ভোগান্তি তৈরি করা অসভ্য মানুষের কাজ। সবাই মিলে সচেতন হলে দূষণ ও ভোগান্তি উভয়ই লাঘব সম্ভব।
বরমী ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, স্থানীয়দের নদীর তীরে নৌঘাট ঘিরে বর্জ্য ফেলা বন্ধে অনেকবার সতর্ক করলেও কেউ শুনছেন না। স্থায়ীভাবে বর্জ্য ফেলানো বন্ধে বাজারের বণিক সমিতির সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
বাজারের ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম।