বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি সমর্থিত এমপি ‘পিস্তল বাবলুর’ বরাদ্দ বাণিজ্য

প্রকাশিত : ০৭:১৫ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার

বিএনপি-সমর্থিত-এমপি-পিস্তল-বাবলুর-বরাদ্দ-বাণিজ্য

বিএনপি-সমর্থিত-এমপি-পিস্তল-বাবলুর-বরাদ্দ-বাণিজ্য

ফাটল ধরা ক্লাসঘর। টিনের ছাউনি দিয়ে গড়া স্কুলঘর। ছাদের বিমের পলেস্তারা খসে পড়ার ভয়ে স্কুল বসে বারান্দায়। বছর দশেক আগেও এমন দৃশ্য চোখে পড়তো অহরহ।

তবে এখন তালিকা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। প্রয়োজন অনুযায়ী করা হচ্ছে সংস্কারও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার কাজের তদারকি করছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিতে মেতে উঠেছেন বিএনপি সমর্থিত এক এমপি। স্কুলের একাডেমিক ভবন নির্মাণে বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার নামে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ। বরাদ্দ বাণিজ্যে মেতে আছেন তিনি। এমপি হওয়ার দুই মাসের মাথায় বদলে যায় তার ভাগ্য!

দুর্নীতির নানা অভিযোগে সমালোচিত এই এমপির নাম রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী। ‘পিস্তল বাবলু’ নামেও পরিচিত তিনি। বাবলু বগুড়ার-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র এমপি।

অভিযোগ রয়েছে, বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমপি বাবলু। একইসঙ্গে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে যখন-তখন তার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করেন তিনি। এতে  ‘পিস্তল বাবলু’ নামেও পরিচিতি পেয়েছেন।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর বেলপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ। বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমপি বাবলু। বছর তিনেক আগে এমপি বাবলুকে টাকা দেন তিনি। এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে এমপি বাবলু আরো দুই লাখ টাকা দাবি করছেন। ফলে টাকা ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে এমপি বাবলুর বাড়িতে গিয়ে তার হাতেই দুই লাখ টাকা দিয়েছি। আমার বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণে বরাদ্দ পাইয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে টাকা দেওয়া হয়। এখন বরাদ্দ তো দূরের কথা, টাকা ফেরত চাইতে গেলে আরো দুই লাখ টাকা দাবি করছেন এমপি। এমপি বলছেন, চারতলা ভবন নির্মাণে বরাদ্দ পেতে আরো দুই লাখ টাকা দিতে হবে। তাছাড়া বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে না। আমি এখন বরাদ্দ ও টাকা ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। 

তিনি আরো বলেন, গত আগস্ট মাসে বগুড়ার ১৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ আসে। এরমধ্যে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এমপি বাবলু। শুধু আমার কাছ থেকেই নয়, আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই এমপি। ঋণ করে এমপিকে টাকা দিয়েছিলাম। বেতনে টাকা থেকে প্রতি মাসে কিস্তি দিয়ে সেই ঋণ শোধ করেছি।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বাসিন্দা বাদশা আলমগীর অভিযোগ করেন, বরাদ্দ দেওয়ার নামে তার কাছ থেকেও ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা নেন এমপি বাবলু। পরবর্তীতে বরাদ্দসহ নগদ টাকার মাধ্যমে ৩ লাখ টাকা শোধ করেন বাবলু। আর বাকি রাখেন ৯৫ হাজার টাকা। গত ২১ সেপ্টেম্বর (বুধবার) এমপি বাবলুকে উপজেলা পরিষদে দেখে বাকি টাকা ফেরত চাইতে যান তিনি। টাকা ফেরত চাওয়ার পরপরই বাবলু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এ সময় বাবলুর সঙ্গে থাকা রেজাউল নামের একজন তাকে পাইপ দিয়ে আঘাত করেন। পরে হট্টগোল শুনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে আসলে তার দিকে লাইসেন্স করা পিস্তল তাক করেন এমপি বাবলু।

তিনি বলেন, বাবলু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বরাদ্দ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। শাজাহানপুর উপজেলার অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এমপি বাবলু।’

অভিযোগের বিষয়ে এমপি বাবলুর সঙ্গে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।