পরিবারের রত্ন ছিল ২ বোন, হলো না বাবার স্বপ্নপূরণ
প্রকাশিত : ০৮:১৫ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
পরিবারের-রত্ন-ছিল-২-বোন-হলো-না-বাবার-স্বপ্নপূরণ
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দেবীপুর ইউনিয়নের মুজাবর্ণী গ্রামের বাসিন্দা দীপক চন্দ্র রায়। পেশায় তিনি শিক্ষক। গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়ার আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় দুই মেয়ে ভূমিকা রানী (১৫) ও দীপশিখাকে (১০) হারিয়েছেন।
বড় মেয়ে ভূমিকা রানী পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে দীপশিখা বোদা কিন্ডার গার্টেনের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণক্ষমতার নৌকাটিতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। কয়েকজন সাঁতরে তীরে আসতে পারলেও অধিকাংশই পানিতে ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
দীপক চন্দ্র রায়ের ভাই বিশ্বজিৎ বলেন, আমাদের পরিবার থেকে পাঁচজন গিয়েছিল মহালয়া দেখতে। তার মধ্যে আমার বড় ভাইয়ের দুই মেয়ে গিয়েছিল। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তারা অনেক আনন্দ উল্লাস করে বের হয়েছিল। আর বাড়িতে ফিরল দুটি নিথর দেহ। এই শোক কেটে ওঠা সম্ভব না।
দীপক চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ছন্দা রানী বলেন, আমার চোখের সামনে সন্তানরা নদীতে পড়ে যায়। আমাকে কে কীভাবে বাঁচিয়েছেন আমি নিজেও বলতে পারছি না। মেয়ে দুটো এবারের পূজা নিয়ে আনন্দে ছিল। আজ সব শেষ হয়ে গেল আমাদের। কেউ রইলো না আর।
দীপক চন্দ্র রায় বলেন, দুইটা মাত্র কলিজার টুকরা মেয়ে ছিল আমার। আমার স্বপ্নগুলো চুরমার হয়ে গেল। খুব স্বপ্ন দেখেছি বড় মেয়ে লম্বা ছিল তাকে পুলিশ বানাবো আর ছোট মেয়েকে ডাক্তার বানাবো। এখন কে করবে আমার এই স্বপ্ন পূরণ। আমার তো সব শেষ আজ। কী নিয়ে বেঁচে থাকব।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে সদর উপজেলার তিনজন মারা গেছেন। তার মধ্যে একই পরিবারের দুই মেয়ে রয়েছে। এ রকম দুর্ঘটনা আসলে কষ্টদায়ক। উপজেলা প্রশাসন পরিবার দুটির পাশে থাকবে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, জেলার ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা এটি। এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও তিনজন নিখোঁজ আছেন। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।