সরকারি কর্মচারীদের সামাজিক মাধ্যমে মতামত দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল শ্রীলংকা
প্রকাশিত : ০৫:৫০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
সরকারি-কর্মচারীদের-সামাজিক-মাধ্যমে-মতামত-দেওয়ার-ওপর-নিষেধাজ্ঞা-দিল-শ্রীলংকা
দেশটির জনপ্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানায়, ১৫ লাখ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীর জন্য একটি নতুন সরকারি আদেশ জারি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলা নিষেধাজ্ঞা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আদেশে বলা হয়, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন সরকারি কর্মকর্তার মতামত প্রকাশ করা...অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এটা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।’
গত বছরের শেষের দিক থেকে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলংকা সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে।
করোনা মহামারির আগে শ্রীলংকা মার্কিন ডলারসহ বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার জন্য পর্যটন খাতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু দুই–আড়াই বছর ধরে চলা কোভিডের কারণে পর্যটকের আগমন বন্ধ থাকায় বিদেশি মুদ্রার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।
আরো পড়ুন>> ব্রাজিলে সেতু ধসে নিহত ৩
বিশেষ করে বছরের পর বছর আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও চীনের কাছ থেকে উচ্চসুদের ঋণ নেয়ার কারণে শ্রীলংকার অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দেয়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করতে ব্যর্থ হয়।
এরই মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানিসংকট শুরু হয়। মূল্যস্ফীতির হারও বেড়ে আকাশছোঁয়া। মূল্যস্ফীতির হার এখন সবচেয়ে বেশি জিম্বাবুয়েতে। এরপরই শ্রীলংকা। এই সংকট দেশটিতে গণবিক্ষোভ উসকে দেয়। সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে না পারার অভিযোগ তুলে জনগণ রাজপথে নেমে আসে। ফলে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষে জুলাই মাসে পদত্যাগ করার আগে বিদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। চলতি বছরের শুরুতে দেশটি ঋণখেলাপিহয়ে পড়ে।
সম্প্রতি প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং শিক্ষকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, খাবারের অভাবে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী স্কুলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। খাবারের অভাবে অনেক শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে বলেও খবর এসেছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেহেলিয়া রামবুকওয়েলা শিশুদের পুষ্টিঘাটতির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হয়ে জনস্বাস্থ্যকর্মীরা বিষয়টি অতিরঞ্জিত করছেন।
আরো পড়ুন>> স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, দেড় বছরের শিশুকন্যাকে পুকুরে ছুড়ে মারলেন বাবা!
ইতিমধ্যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তার সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৬০ লাখ) ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা’য় ভুগছে। তাদের ‘মানবিক সহায়তা প্রয়োজন’।
চলমান সংকট নিয়ে যাতে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হতে না পারে, সে জন্য গোতাবায়ার উত্তরসূরি রনিল বিক্রমাসিংহে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দমন করেছেন। রাজধানীর বেশির ভাগ জায়গায় বিক্ষোভও নিষিদ্ধ করেছেন। চলতি মাসে তাঁর সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে ২৯০ কোটি ডলার সহায়তা (বেলআউট) চুক্তি করেছে।
কলম্বোর টিকে থাকা নির্ভর করছে ঋণদাতাদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর ওপর। কারণ, দেশটির কাঁধে এখন ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণের বোঝা। তবে দেশটির সবচেয়ে বড় পাওনাদার চীন।
সূত্র: খালিজ টাইমস