বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে গ্রামে মাচাং ঘর বানিয়ে ৬০ পরিবারের বসবাস

প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

যে-গ্রামে-মাচাং-ঘর-বানিয়ে-৬০-পরিবারের-বসবাস

যে-গ্রামে-মাচাং-ঘর-বানিয়ে-৬০-পরিবারের-বসবাস

রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপির সীমান্তবর্তী একটি দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ‘মিতিঙ্গাছড়ি’। এই গ্রামে বাঁশের তৈরি মাচাং ঘর বানিয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ পরিবারের বসবাস করছেন। সবগুলো পরিবারের সংসার চলে পাহাড়ে জুমচাষ করে এবং পাহাড়ি কলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি বিক্রি করে। 

রাজস্থলী সদর উপজেলা থেকেই প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এ গ্রামটি। পাহাড়ি গ্রাম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত দুর্গম মিতিঙ্গাছড়ি জনপদ। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলা থেকে বিলাইছড়ি উপজেলার পারুয়া পর্যন্ত একটি সীমান্তবর্তী সড়ক নিমার্ণাধীন রয়েছে। রাজস্থলী থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামটি। উঁচু নিচু পাহাড় বেয়ে যেতে হয় এ গ্রামে। যেতে প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে বাঁশের তৈরি মাচাং ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন, ত্রিপুরা সম্প্রাদয়ের মানুষ। 

জানা গেছে, বর্তমান আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় পিছিয়ে রয়েছে এই দুর্গম গ্রামটি। খাওয়ার পানির একমাত্র ভরসা পাহাড়ি ঝিরি-ছড়া এবং সবাই পাহাড়ে জুম চাষ করে এবং পাহাড়ি ফলমূল খেয়ে এবং বেচা-কেনা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ।

জানা গেছে, কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কাঁধে করে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট উপরে এসে মূল সড়ক থেকে গাড়ি করে রাজস্থলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। 

মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ভাগ্যরাম ত্রিপুরা জানান, এখানকার একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো উঁচু-নিচু পাহাড় বেয়ে যাতায়াত করা। তাদের উৎপাদিত ফসল বা ফলমূল কাঁধে করে ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট উঁচু পাহাড় বেয়ে বাজারে নিতে খুবই কষ্ট হয়। এগুলো বেচা-বিক্রি করে তাদের কোনো রকম সংসার চলে।

একই গ্রামের বাসিন্দা জয়মনি ত্রিপুরা জানান, এ দুর্গম গ্রামে মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস জুম চাষ করা এবং পাশাপাশি বিভিন্ন শাক-সবজি রোপণ করা। তবে গ্রামটি বেশ দুর্গম হওয়ায় খাওয়ার পানির অভাব থাকে। ছড়া এবং ঝিরি থেকে মানুষ পানি পান করে। ফলে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এ গ্রামের মানুষ। 

রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপির সদস্য জয়োরাম ত্রিপুরা জানান, খাওয়ার পানি সংকটে প্রতিনিয়িত এ গ্রামে রোগ বালাই লেগেই থাকে। কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। রোগীদের নিয়ে উঠতে হয় প্রায় ৪০০ ফুট উঁচুতে। 

রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা জানান, মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামটি বেশ দুর্গম। তাদের খাওয়ার পানি পান করতে হয় ছড়া বা ঝিরি থেকে এবং বর্ষাকালে ছড়ার পানিও ঘোলাটে হয়ে গেলে পানি পান করা খুবই কষ্ট সাধ্য হয়। এই পানি পান করলে ডায়ারিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি হয় তাদের মাঝে।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী জানান, উন্নয়নের ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ও প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রধান্য দিয়ে থাকেন। আর এ অঞ্চলে যদি এসব সমস্যা থাকে তাহলে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।