মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রেড বুলের সবুজ গালিচায় অদম্য এক চিতাবাঘ! 

প্রকাশিত : ০৭:৩০ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার

রেড-বুলের-সবুজ-গালিচায়-অদম্য-এক-চিতাবাঘ 

রেড-বুলের-সবুজ-গালিচায়-অদম্য-এক-চিতাবাঘ 

ফ্লু-জনিত কারণে শুরুর একাদশে ছিলেন না। মাঠে নামলেন ৫৫ মিনিটের দিকে। তিনি মাঠে নামার সময় পুরো গ্যালারিজুড়ে যেভাবে আনন্দ-উল্লাসের শব্দ শোনা গেছে, ম্যাচের আগের সময়ে এমনটা পায়নি কেউই।

অতঃপর রাজা নামলেন। নামলেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার, বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত জাদুকর লিওনেল মেসি। 

নামার পর বলে প্রথম টাচ করতে সময় নিলেন দেড়শ সেকেন্ড তথা আড়াই মিনিটের কিছু বেশি। এই সময়টা নিজের পরিচিত এলাকায় হাটলেন, যেন আক্রমণে নামার আগে নিজের মতো করে সব দেখে নেয়া।

৫৮ মিনিট পূরণের কয়েক সেকেন্ড আগে ফার্স্ট টাচ। এরপরের দুই মিনিটে একবার করে বলে পা ছুইয়েছেন। ৬১ মিনিটেই শুধু বলে টাচ করেননি বা বলতে গেলে তার কাছে বল আসেনি।

রেড বুল অ্যারেনায় এভাবেই হালকাভাবে কাটিয়ে দেন মিনিট চারেক। মাঠে নামার দশ মিনিট পর বলের সঙ্গে সংযুক্তি বাড়িয়ে নেন মেসি। তবে এসময় মিস পাস, বল লুজ করতে থাকেন প্রায়শই। দেখে মনে হচ্ছিল, এখনো পুরোপুরি ছন্দ ফিরে পাননি। 

তবে দর্শকদের হতাশ করবেন কেন লিও? তার জন্যই যে হাজার হাজার দর্শক মাঠে এসেছেন, গলা ফাটিয়ে ডাকছেন প্রিয় তারকাকে। 

ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে দেখা গেলো অন্য মেসিকে। এর মাঝে শুরুতে কয়েকবার সতীর্থদের পাস - টু পাস, শট এভাবে চেষ্টা করলেন। অর্থাৎ মেসি পাস দেবেন, সতীর্থ সঙ্গে সঙ্গে তাকে সেটা ফিরিয়ে দেবেন ও মেসি শট নেবেন। তবে এতে কাজ হলো খুব একটা। রাজা বুঝলেন, আরেকটু গতি বাড়াতে হবে।

হ্যাঁ, ঠিক চিতাবাঘের মতোই শিকারের আগে ধীরে ধীরে নিজের গতি ও বলের সঙ্গে নিজের সংযুক্তি বাড়িয়েছেন মেসি। একদম শুরুতে মাঠে নামার পর বল টাচ করতে সময় নিয়েছেন। এরপর টাচ বাড়িয়েছেন, ওয়ান টু ওয়ান খেলেছেন। অতঃপর শেষ দশ মিনিটে চূড়ান্ত আক্রমণ।

মেসি যখন আপন মহিমায় খেলা শুরু করেন, তখন আসলে কারো কিছু করার থাকে না। তাইতো ৮৬ মিনিটে নিজের মতো বল বানিয়ে নিয়ে আশেপাশে কয়েকজন ডিফেন্ডার থাকলেও জ্যামাইকা গোলরক্ষককে বোকা বানান, কেউই অবাক হননি। এটাই তো মেসি। যিনি মুহূর্তের মাঝে পালটে দেন হিসাবনিকাশ। 

মিনিট তিনেক পর ডি বক্সের একটু বাইরে ফ্রি কিক। বহুদিন মেসি ফ্রি কিক থেকে গোল করেননি। শিকারির মনে হয়তো এই ক্ষুধা নিবারণের ইচ্ছাটা ছিল ভালোভাবেই। তাই এত কাছ থেকেও জ্যামাইকার রক্ষণভাগকে বোকা বানিয়ে বল জড়ান জালে। আর মুগ্ধ নয়নে তার কারিশমা উপভোগ করে সারাবিশ্ব।

মাঝে তিনবার মাঠের মাঝে দর্শকরা ঢুকে পড়েছে, মেসির ছোয়া পেতে। মাত্র আধঘন্টার মাঝে একজন খেলোয়াড়কে স্পর্শ করতে শাস্তি পাওয়া নিশ্চিত জেনেও এতগুলো পাগল ভক্তদের ছুটে আসা... এটা মেসি বলেই হয়তো সম্ভব।

ম্যাচে ৩-০ গোলে জেতে আর্জেন্টিনা। যেখানে মাত্র ৩৫ মিনিটেই নামের পাশে দুটি গোল যোগ করেন মেসি। একদম ধীরস্থির শুরুর পর গতি বাড়ানো, এরপর আক্রমণ ও শিকার... নিউ জার্সির রেড বুল অ্যারেনায় যেন চিতাবাঘই হয়ে নেমেছিলেন মেসি। 

মেসি এই ফর্মটা বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারলে তা অন্য যেকোনো দলের জন্যই হবে চিন্তার কারণ। তবে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা তো এই মেসিকেই চান। প্রিয় লিওর হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা দেখার যে স্বপ্ন, তা পূরণ করতে প্রয়োজন এই চিতাবাঘকেই।