শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৮ বছরে কমেছে জলাতঙ্ক রোগী, চট্টগ্রামের আতঙ্ক ‘কুকুর’

প্রকাশিত : ০৪:১৫ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার

৮-বছরে-কমেছে-জলাতঙ্ক-রোগী-চট্টগ্রামের-আতঙ্ক-কুকুর

৮-বছরে-কমেছে-জলাতঙ্ক-রোগী-চট্টগ্রামের-আতঙ্ক-কুকুর

সম্পর্কিত খবর আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস, মৃত্যু আর নয়, সবার সঙ্গে সমন্বয় জলাতঙ্ক। যার অপর নাম হাইড্রোফোবিয়া বা পাগলা রোগ। রেবিজ ভাইরাস নামক এক ধরনের নিউরোট্রপিক ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগ হয়। যেটি গৃহপালিত প্রাণী ও বন্যপ্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়। আক্রান্ত রোগী পানি দেখে বা পানির কথা মনে করে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বলে এ রোগের নাম হয়েছে জলাতঙ্ক।

চট্টগ্রামে গত আট মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২২১ জন। অন্যান্য প্রাণীর মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন ৯১৬ জন। গত দুই বছরে এ রোগে মারা গেছেন পাঁচজন। যাদের মধ্যে চলতি বছরেই দুজন মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নিয়েছেন ছয় হাজার ৮৫ জন। এর মধ্যে কুকুরের কামড়ের জন্য নিয়েছেন তিন হাজার ৫৮০ জন ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য নিয়েছেন দুই হাজার ৫০৫ জন। টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। তিন হাজার ৬০৩ জন পুরুষ ও দুই হাজার ৪৮২ জন নারী এ টিকা নেন। যাদের মধ্যে আবার ১৫ বছরের কম বয়সী রয়েছেন দুই হাজার ৩০৩ জন ও ১৫ বছরের বেশি বয়সী রয়েছেন তিন হাজার ৭৮২ জন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিজেস’র (বিআইটিআইডি) তথ্যমতে, গত আট মাসে চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৭৭ জন। এর মধ্যে কুকুরের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এ সময়ে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ২২১ জন ও অন্যান্য প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৯১৬ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২৮৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৩০ জন, মার্চে ২৭৫ জন, এপ্রিলে ২৪৪ জন, মে’তে ২৪৯ জন, জুনে ২৫৭ জন, জুলাইয়ে ২৫১ জন ও আগস্টে ২৮৫ জন শনাক্ত হন। এছাড়া এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একজন ও মার্চে একজন মারা যান। মারা যাওয়া দুজনের কেউই টিকা নেননি।

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, ‘বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস’। জলাতঙ্কের ভয়াবহতা উপলব্ধি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধ ও নির্মূলের লক্ষ্যে ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনে দিবসটি পালন হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্ক: মৃত্যু আর নয়, সবার সঙ্গে সমন্বয়’।

জলাতঙ্ক একটি মরণব্যাধি। তবে অপচিকিৎসা, টোটকা না নিয়ে যথাসময়ে চিকিৎসা ও টিকা নিলে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, জলাতঙ্ক র‌্যাবিস ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এটির প্রধান বাহক হলো কুকুর। বিড়াল, খেঁকশিয়াল, বেজি, বানর, বাদুড়ের কামড় কিংবা আঁচড়ের মাধ্যমেও এটি হতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা ও টিকা নিলে জলাতঙ্কে মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- আক্রান্ত স্থান ১৫ মিনিট ধরে পানির কল ছেড়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিলে উপস্থিত ৭৫-৮০ ভাগ জলাতঙ্কের জীবাণু চলে যায়। 

তিনি আরো বলেন, কুকুর-বিড়াল কামড়ালে টিকার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এটির উপসর্গ দেখা দিলে আর কোনো চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগী মারা যান। তাই এ বিষয়ে সবাইকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামে জলাতঙ্ক রোগী কম, তবে কুকুরে কামড়ানোর টিকা নেয়ার সংখ্যা বেশি। জলাতঙ্ক রোগী কমাতে হলে টিকা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা বিনামূল্যে অ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) ও র‌্যাবিস ইমোনোগ্লুবিন (আরআইজি) সরবরাহ করে আসছি। তবে এর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো সচেতনতা বৃদ্ধি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, প্রতি বছর প্রায় তিন লাখের বেশি জলাতঙ্ক সংক্রমণকারী প্রাণীর কামড় কিংবা আঁচড়ের রোগীকে বিনামূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দিচ্ছে সরকার। এর ফলে অনেকাংশে কমেছে জলাতঙ্কে আক্রান্তের সংখ্যা। অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্যমতে- ২০১৪ সালে জলাতঙ্ক রোগী শনাক্ত হন ১০৬ জন। এর পর থেকে ২০১৫ সালে ৮৩ জন, ২০১৬ সালে ৬৬ জন, ২০১৭ সালে ৮০ জন, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৫৭ জন, ২০২০ সালে ২৬ জন, ২০২১ সালে ৪০ জন এবং ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত ৩১ জন শনাক্ত হন।

টিকা কেন গুরুত্বপূর্ণ

সাধারণত জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগী মারা যান। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এটির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। কিছু উপশম প্রশমনের চিকিৎসা ছাড়া জলাতঙ্কের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কার্যকর টিকা রয়েছে, যা রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে শরীরে প্রয়োগ করতে পারলে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব।

জলাতঙ্কের জন্য দুই ধরনের টিকা রয়েছে। ক্ষতের তীব্রতা ও আধিক্যের ওপর ভিত্তি করে কারো ক্ষেত্রে এক ধরনের, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে উভয় ধরনের টিকা প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে। প্রথম দিন টিকা দেওয়ার পর ৩, ৭, ১৪, ২৮ ও ৯০তম দিনে টিকার মোট ৬টি ডোজ প্রয়োগ করতে হয়। নাভির চারপাশে চামড়ার নিচে এ টিকা দেওয়া হয়। টিকার সবকটি ডোজ সময়মতো গ্রহণ করে টিকার কোর্স সম্পন্ন করা আবশ্যক।

বিশেষ করে পশুচিকিৎসক, চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দেখাশোনাকারী ও যারা বাড়িতে কুকুর বা বিড়াল পোষেন, তাদের জলাতঙ্কের প্রতিরোধমূলক টিকা দেওয়া হয়। এ ধরনের ব্যক্তিদের ০, ৭ ও ২১ বা ২৮তম দিনে টিকার তিনটি ডোজ ও প্রতিবছর বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়।