মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইতালির প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া কেই এই জর্জিয়া?

প্রকাশিত : ০৫:৫০ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

ইতালির-প্রধানমন্ত্রী-হতে-যাওয়া-কেই-এই-জর্জিয়া

ইতালির-প্রধানমন্ত্রী-হতে-যাওয়া-কেই-এই-জর্জিয়া

তরকারি কেনার জন্য ছোটবেলায় দাদার হাত ধরে ইতালির রোমের বাজারে লাইনে দাঁড়াতে গিয়েছিলেন জর্জিয়া মেলোনি। সেই মেয়েটি এখন ইতালির কট্টর ডানপন্থী দলের হয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। ছোটবেলা থেকে আজকের জর্জিয়াকে নিজ চোখে দেখেছেন সেই বাজারের সবজি বিক্রেতা আনা মারিয়া তর্তোরা।

আনা মারিয়া তর্তোরা বলেন, আমি কখনো ধারণা করতে পারিনি যে, ছোট্ট যে মেয়েটি তার দাদার হাত ধরে সেখানে তরকারি কিনতে একসময় লাইনে এসে দাঁড়াতো সে এখন ইতালির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

তর্তোরা বলেন, জর্জিয়ার দাদা একজন দারুণ মানুষ ছিলেন এবং তার নাতনিকে খুব ভালোবাসতেন।

জর্জিয়ার নেতৃত্বে তার দলকে নির্বাচনে প্রথম স্থানে নিয়ে যাওয়ায় গর্ব করছেন আনা মারিয়া। তিনি বলছেন, ও আমার শিম খেয়েই বড় হয়েছে। ভালো খেয়েছে সে এবং ভালোই বেড়ে উঠেছে।

রোমের দক্ষিণাঞ্চলের গারবাতেল্লাতে নামে একটি এলাকায় অবস্থিত বাজারটি। সেখানে শ্রমজীবী শ্রেণীর বাস এবং ঐতিহ্যগতভাবে বামদের একটি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

বেনিতো মুসোলিনির পর ইতালির প্রথম উগ্র ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে থাকা এক রাজনীতিকের বেড়ে ওঠার জায়গা হিসেবে এলাকাটি একেবারেই বেমানান।

ইতালির নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেলা একটি স্থিতিশীল সরকারের নেতৃত্ব কে দিতে পারবেন সেটি নির্ধারণ করতে দলীয় নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। জর্জিয়া মেলোনি এ দায়িত্বের জন্যে একদম সম্মুখভাগে রয়েছেন।

জর্জিয়া মেলোনি সম্প্রতি একটি ভিডিওতে ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফরাসি ভাষায় কথা বলেছেন।

রোমে জন্মগ্রহণ করা জর্জিয়া মেলোনির বয়স যখন মাত্র এক বছর তখন তার বাবা ফ্রান্সেসকো পরিবারকে ছেড়ে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে চলে যান। ফ্রান্সেসকো ছিলেন বামপন্থি আর তার মা আনা ডানপন্থি। অনেকে মনে করেন বাবার অনুপস্থিতিতে প্রতিশোধে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছেন।

তার পরিবার নানাবাড়ির কাছে গারবাতেল্লায় চলে যায়। সেখানেই ১৫ বছর বয়সে নব্য ফ্যাসিবাদী দল ইতালিয়ান সোশ্যাল মুভমেন্টের যুব ফ্রন্টে যোগ দেন তিনি। পরে দলটির উত্তরসূরি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের ছাত্র শাখার সভাপতি হন তিনি।

১৯৯২ সালে জর্জিয়া মেলোনি তার দরজায় কড়া নেড়েছিলেন। বয়সে ১০ বছরের বড় মার্সিলিও তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং রাজনৈতিক মিত্র হয়ে ওঠেন। মার্সিলিও আজ আবরুজো অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলছেন, হালকা পাতলা একটা মেয়ে ছিল। কিন্তু সবসময় খুব গুরুগম্ভীর এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ছাত্র সভাগুলোতে সে নজর কাড়তো। তার হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে নিতে চাইলে যে কাউকে সে থামিয়ে দিত।

বছরের পর বছর ধরে মার্সিলিও এবং মেলোনি পারিবারিক ছুটি, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং বিতর্কের দিনগুলো একসঙ্গে কাটিয়েছেন। মার্সিলিও তাকে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠতে দেখেছেন।

২০০৮ সালে ৩১ বছর বয়সে জর্জিয়া মেলোনি ইতালির সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হন। তিনি সিলভিও বারলুসকোনির যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে নিজের দল গঠনের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মাত্র চার শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।

এখন মারিও দ্রাঘির জাতীয় ঐক্যজোট সরকারের বাইরে থাকা একমাত্র প্রধান দল হিসেবে ব্রাদার্স অব ইতালি ২২ থেকে ২৬ শতাংশ ভোট জিততে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সিলভিও বারলুসকোনির সঙ্গে তার ডানপন্থি জোট এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাটিও সালভিনির লিগ পার্টি মিলে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথে আছে।

মেলোনি যদিও ইতালির পশ্চিমা মিত্রদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। যেমন দ্রাঘি সরকারের ইউক্রেনপন্থাকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন, কিন্তু তার কঠোর রক্ষণশীল সামাজিক নীতিগুলো অনেককে উদ্বিগ্ন করছে।

লিবিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের নৌকা বন্ধ করতে তিনি নৌ অবরোধের আহ্বান জানিয়েছেন। ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মেলোনি তার নারী পরিচয়টি ব্যবহার করেছেন।

ইতালির দীর্ঘ অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং প্রবীণদের রাজনীতির সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার মিত্রদের জন্য আমূল রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করবেন।

‘ঈশ্বর, দেশ ও পরিবার’ এ তিনবস্তুকে এক করেই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছিলেন মেলোনি।