স্বপ্ন দেখাচ্ছে চা, রফতানি বেড়েছে দ্বিগুণ
প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার
স্বপ্ন-দেখাচ্ছে-চা-রফতানি-বেড়েছে-দ্বিগুণ
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোই বোর্ডের প্রধান লক্ষ্য। উৎপাদন বাড়াতে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ক্ষুদ্রায়তন পদ্ধতিতে শুরু হয়েছে চায়ের চাষাবাদ।
চা বোর্ডের তথ্যমতে, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) বিশ্বের পাঁচটি দেশে এক লাখ ৫৯ হাজার কেজি চা-পাতা রফতানি হয়েছিল। চলতি বছরের একই সময় বেড়েছে রফতানির পরিমাণ। বেড়েছে দেশের সংখ্যাও। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সাতটি দেশে তিন লাখ ২৬ হাজার কেজি চা-পাতা রফতানি হয়। যা আগের বছরের দ্বিগুণ। এ অবস্থায় রফতানি খাতকে আরো প্রসারিত করতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কেটিং কোম্পানি ইংল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে চা বোর্ড। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে চা আমদানির বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানে ১৯ হাজার কেজি লুজ (খোলা) চা, মালয়েশিয়ায় পাঁচ হাজার ও যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ হাজার প্যাকেট চা রফতানি হয়। ফেব্রুয়ারিতে রফতানি হয়নি। মার্চে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক লাখ ২৪ হাজার কেজি ও যুক্তরাষ্ট্রে ২২ হাজার কেজি প্যাকেট চা রফতানি হয়। এছাড়া এপ্রিলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৭৫ হাজার প্যাকেট চা, মে মাসে জাপানে এক হাজার কেজি প্যাকেট চা এবং জুনে কুয়েতে ২২ হাজার কেজি ও সাইফ্রাসে তিন হাজার কেজি প্যাকেট চা রফতানি হয়।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে বড় চালান রফতানি হয় দুটি দেশে। এর মধ্যে সাইফ্রাসে চার হাজার কেজি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক লাখ ১২ হাজার কেজি চা রফতানি হয়।
চট্টগ্রাম চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম (এনডিসি পিএসসি) বলেন, চায়ের রফতানি বাড়াতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। কোয়ালিটি আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় রফতানিকারকদের চার শতাংশ ক্যাশ ইনসেন্টিভ দেওয়া হচ্ছে। রফতানি বাড়াতে আমরা নিজেরাও বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কেটিং কোম্পানি ইংল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছিল। আমাদের কিছু চা সেখানে যাবে। কোয়ালিটি বাড়াতে আমরা কোয়ালিটি অ্যান্ড টেস্টিং কোড চালু করেছি। কীভাবে রফতানি আরো বাড়ানো যায় আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি।
তিনি বলেন, চায়ের উৎপাদন বাড়াতে চট্টগ্রাম, সিলেট, শ্রীমঙ্গলের পাশাপাশি সমতল ভূমি বিশেষ করে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষুদ্রায়তন পদ্ধতিতে চায়ের চাষাবাদের সুযোগ দিচ্ছি আমরা। এ পদ্ধতিতে সুফলও মিলছে। এ বছর ১৪ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন চা উৎপাদিত হয়েছে। আগামী বছর তা ১৮ মিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করছি।
১৮০০ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য জমি বরাদ্দ হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেখানে চা চাষ বিলম্বিত হয়। পরে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়, যা কুণ্ডদের বাগান নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠার পরপর বাগানটিও বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট রোডের কাছে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত মালনীছড়াই বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান।
দেশের ১৬৭টি বাণিজ্যিক চা বাগানের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ২২টি। সবচেয়ে বেশি চা বাগান সিলেট বিভাগে। বিভাগটির মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ২৪টি ও সিলেট জেলায় ১৯টি চা বাগান রয়েছে। এছাড়া পঞ্চগড়ে সাতটি, রাঙামাটিতে দুটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা বাগান রয়েছে।