বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অশ্রুভেজা নয়নে শেষ ভাষণে যা বললেন টেনিসের রাজা ফেদেরার

প্রকাশিত : ০৬:৩০ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার

অশ্রুভেজা-নয়নে-শেষ-ভাষণে-যা-বললেন-টেনিসের-রাজা-ফেদেরার

অশ্রুভেজা-নয়নে-শেষ-ভাষণে-যা-বললেন-টেনিসের-রাজা-ফেদেরার

অঝোর ধারায় কাঁদছেন। বার বার সবাইকে বলছেন, ‘এটা আনন্দের কান্না। আমি আনন্দে কাঁদছি।’ কিন্তু রজার ফেদেরার নিজেকে বোঝাতে পারলেন কি?

টেনিস বিশ্বের এক ‘রাজা’ বিদায় নিচ্ছেন। তাকে ঘিরে রয়েছেন রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। তৈরি হচ্ছে কিছু ‘অদ্ভুত’ দৃশ্যপট। ফেদেরারকে জেতাতে কোর্টে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন তার প্রবল প্রতিপক্ষ নাদাল। ম্যাচ শেষে শিশুর মতো কাঁদতে থাকা ফেদেরারের কাঁধে হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জকোভিচ।

পাশে দাঁড়িয়ে অ্যান্ডি মারে, মাতেয়ো বেরেত্তিনি, ক্যাসপার রুডরা। রাজার বিদায় তো এমনভাবেই হওয়া উচিত। ফেদেরার এমনটাই চেয়েছিলেন। জীবনের শেষ ম্যাচ খেলে মাইক হাতে নিয়ে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বললেন, ‘কোনো মতে কেটে গেল, তাই না? আমি খুশি। তোমাদের যেমন বলছিলাম। আমার কোনো দুঃখ নেই।’

লেভার কাপে জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস টিয়াফো জুটির বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন রজার ফেদেরার এবং রাফায়েল নাদাল। এক সময় যে দু’জনকে দেখা যেত একে অপরের থেকে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ছিনিয়ে নিতে, তারা লড়লেন একে অপরকে জেতাতে।

দু’জনে মিলে ৪২টি সিঙ্গেলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। তবে শনিবার ভোরে কেউ পারলেন না লেভার কাপের ম্যাচটা জিততে।

ম্যাচ শেষে ফেদেরার বলেন, ‘আরো এক বার জুতোর ফিতেটা বাঁধলাম। যাই করলাম, শেষবারের মতো করলাম। সমর্থক, বন্ধু, পরিবার, সতীর্থদের পাশে পেয়ে দারুণ লাগছে। খুব ভাল একটা ম্যাচ হল। আমি খুশি।’

মাইক হাতে জীবনের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের পর কথা বলার সময় অনেকক্ষণ আবেগকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারলেন না। নাদালকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলেন। সেই অবস্থাতেই ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক বলেন, ‘নাদালের সঙ্গে এক দলে খেলাটা দারুণ উপভোগ করলাম। এখানে যেসব কিংবদন্তি রয়েছে, সকলকে ধন্যবাদ।’

টেনিস খেলার সময় এক জন খেলোয়াড় সাজঘরে নিজেকে একা তৈরি করে। টানেল দিয়ে হেঁটে একা কোর্টে ঢোকে। সেখানে একা এক জন প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করে। অনেকে বলেন টেনিস নাকি একজন খেলোয়াড়কে খুব একা করে দেয়।

২৪ বছর ধরে টেনিস খেলার অভিজ্ঞতা ফেদেরারকেও এটা বুঝিয়েছে। তাই জীবনের শেষ ম্যাচে একা খেলতে চাননি। একটা দলের হয়ে নামতে চেয়েছিলেন। আর সেই কারণে কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম নয়, লেভার কাপে ইউরোপের হয়ে নেমেছিলেন তিনি। সিঙ্গেলস নয়, ডাবলস খেলার জন্য নাদালকে সঙ্গী করে। 

ফেদেরার বলেন, ‘আমি একা হয়ে যেতে চাইনি। এক মুহূর্তের জন্যও নিজেকে একা মনে হয়নি। কিন্তু বিদায় জানানোর সময় আমি দলকে পাশে পেয়েছি। নিজেকে একটা দলের খেলোয়াড় মনে হচ্ছে। সিঙ্গেলস সেটা মনে হতে দেয় না।’

এরপর তিনি বলেন, ‘যারা এত বছর ধরে আমার পাশে ছিল তাদের ধন্যবাদ। এত বছর ধরে তারা আমার সঙ্গে গোটা বিশ্ব ঘুরেছে। সবাইকে ধন্যবাদ। আমার সঙ্গে যারা খেলেছ, আমার বিরুদ্ধে যারা খেলেছ, সকলকে ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে একটা উৎসব চলছে। আমি এটাই চেয়েছিলাম।’

ফেদেরার থামলেন। হাততালি শুরু হল। যে সমর্থকরা এত বছর ধরে ফেদেরারের পাশে ছিলেন, তারা আরো একবার তাদের নায়কের জন্য চিৎকার করে উঠলেন। কোর্টে শেষ বারের মতো সুযোগ পেয়েছেন তারা।

এ সময় ফেদেরার বললেন, ‘দুর্দান্ত একটা সফর। এরকমই হওয়ার কথা ছিল। আমি খুশি টেনিস খেলতে পেরে। এই সফরটা আরো এক বার হলে মন্দ হয় না।’

লন্ডনের ও-টু এরেনায় তখন কান পাতা দায়। হাততালি, চিৎকারে থামতে বাধ্য হলেন ফেদেরার। সেই চিৎকারের উপরে নিজের গলা নিয়ে গিয়ে (মাইকের সাহায্যে) তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এত মানুষ চিৎকার করছে। এ এক অদ্ভুত পাওয়া। আশা করছি আমি ভালই করেছি। অন্তত কথা তো বলতে পারছি (ফোঁপাতে ফোঁপাতে)। সকলে এখানে রয়েছে। খুব ভাল লাগছে। আমার মেয়েরা, ছেলেরা, স্ত্রী, সকলে রয়েছে।’

এরপর থেমে গেলেন ফেদেরার। পারলেন না কান্না আটকাতে। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘ও (স্ত্রী মিরকা ফেদেরার) অনেক আগেই আমাকে থামিয়ে দিতে পারত। কিন্তু ও সেটা করেনি। আমাকে খেলার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছে।’

আর পারলেন না। কান্না বাঁধ ভাঙল। কোনো মতে পরিবারকে আরো একবার ধন্যবাদ জানিয়ে বলা শেষ করলেন।

এর মাধ্যমে শেষ হলো টেনিসের এক অধ্যায়ের। একজন কিংবদন্তির অধ্যায়। একজন রাজার অধ্যায়। যে রাজাকে টেনিস কোর্ট মনে রাখবে আজীবন। একজন খেলোয়াড়ের জীবনে এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া। নয় কী?