শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সবুজ মাল্টা চাষে ভাগ্য বদল

প্রকাশিত : ০৫:১৫ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার

সবুজ-মাল্টা-চাষে-ভাগ্য-বদল

সবুজ-মাল্টা-চাষে-ভাগ্য-বদল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সবুজ জাতের মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে সবুজ জাতের মাল্টার বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিদের মুখে তৃপ্তির হাসি। 

এরইমধ্যে বাগানগুলোতে মাল্টা পরিপক্ষ হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিপণন শুরু হয়েছে। পাহাড়ি লাল মাটি এলাকা হওয়ায় গুণে মানে পুষ্টি সমৃদ্ধ এই মাল্টার চাহিদা ক্রেতাদের কাছে থাকায়, বাগান মালিকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। 

এ অবস্থায় সবুজ মাল্টার পাশাপাশি হলুদ মাল্টা এবং বারো মাসি থাই মাল্টার দিকে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। অনুকূল আবহাওয়া ও উপযোগী পরিবেশ থাকায় প্রতি বছরই জেলাতে বাড়ছে মাল্টার চাষ। প্রতি বছরই চাষিরা মাল্টার নতুন নতুন বাগান করছেন। মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে বাগানিদের সব ধরনের সহযোগীতা করছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সবুজ জাতের মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।

কৃষি বিভাগ ও চাষিরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী বিজয়নগর উপজেলার নোয়াবাদী, মেরশানী, বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুর ও আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমুদাবাদ, রাজাপুর এবং কসবা উপজেলার কিছু এলাকার প্রতিটি বাগানে এখন থোকায় থোকায় মাল্টা আর মাল্টার সমারোহ। গত ২০১৫ সালে কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় প্রথমবারের মতো চাষিরা বারি-১ ও বারি-২ জাতের মালটা গাছের চারা লাগিয়ে ছিলেন। শুরুতে অপরিচিত এই ফলটির চাষাবাদ নিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও খরচ কম আর উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টার চাহিদা থাকায় চাষিরা ব্যাপক লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা। 

সবুজ জাতের মাল্টার পাশাপাশি হলুদ মাল্টার দিকেও চাষিরা ঝুঁকেছেন বলে জানান তারা। এ বছর জেলাতে ১৪১ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষাবাদ করা হয়েছে। ১৪১ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। উৎপাদিত মাল্টা প্রায় ২৭ কোটি টাকা বিক্রি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সবুজ জাতের মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।

মাল্টা বাগানি মো. শিমুল মিয়া বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলাম বেশ কয়েক বছর। সেখান থেকে দেশে এসে মাল্টা বাগান করে মাল্টা চাষ শুরু করেছি। গত বছরও মাল্টা চাষাবাদ করে ভালো লাভবান হয়ে ছিলো। এ বছর আরও অনেক বেশি ফল এসেছে, তাই লাভবান বেশি হবো। 

তিনি আরো বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছি। আমরা যদি কৃষির ওপর নির্ভরশীল হয়, তাহলে বিদেশ থেকে দেশেই বেশি আয় করা সম্ভব হবে।

মো. সাচ্চু মিয়া নামে অপর বাগান মালিক বলেন, আমরা যারা এই এলাকায় মাল্টা বাগান করেছি, আমরা সবাই লাভবান হয়েছি। আমার জমিতে প্রথমে পেয়ারা চাষ করা হতো। পরে ২০১৫ সালে মাল্টা চাষাবাদ শুরু করেছিলাম। গাছ লাগানোর দুই তিন বছর পর থেকেই আমরা মাল্টা বিক্রি করতে পেরেছি। গত ৩ বছরে মাল্টা বিক্রি করে আমরা লাভবান হয়েছি। 

তিনি আরও বলেন, মাল্টা গাছের পাশে অন্যান্য ফলের গাছও লাগানো যায়। আগামীতে হলুদ রঙ্গের মাল্টা যদি আবাদ করা যায়, তাহলে আরো বেশি জমিতে মাল্টা চাষ করার পরিকল্পনা আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সবুজ জাতের মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে।

বাগান মালিক সাজু ভূইয়া বলেন, আমাদের পাহাড়ী এলাকার লাল মাটি হওয়ায় মাল্টা চাষের জন্যে বেশ উপযোগী। মাল্টার ফলন এবারও ভালো হয়েছে, বিক্রিও বেশ ভাল হচ্ছে। কুমিল্লা, নরসিংদী ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারেরা এসে বাগান থেকে সরাসরি মাল্টা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 

মাল্টা চাষি জহির মিয়া বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার তার বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। এরইমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসতে শুরু করেছেন। এছাড়াও অনেকে শখের বসে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়ে মাল্টা কিনছেন।

এদিকে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা বিজয়নগর  উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মো. রহুল আমীন খান জানান, মাল্টা বিদেশী ফল হলেও এটি এখন আমাদের দেশীয় ফলের সঙ্গে সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সাইট্রাস ভিলেজ প্রজেক্ট এর আওতায় কৃষকদেরকে বিনামূল্যে মাল্টার চারাসহ কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়। যার বিপ্লব ঘটেছে এই এলাকার মাল্টা চাষে। বিজয়নগর এলাকার আবহাওয়া ভালো থাকায় মাল্টা চাষিরা এবছর অনেক লাভবান হবে।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর ধরে মাল্টা বিক্রি করে চাষীরা বেশ লাভবান হয়েছে। বর্তমানে সবুজ মাল্টার পাশাপাশি বাউ-৩ এবং বারো মাসি থাই মাল্টার চাষাবাদের জন্য চাষীদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, মাল্টা লাভজনক ফসল হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। প্রতি বছরই জেলায় আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। এ বছর জেলায় ৯টি উপজেলায় ১৪১ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগর, কসবা ও আখাউড়া এলাকায় পাহাড়ী মাটি হওয়ার কারণে সেসব এলাকায় আবাদের পরিমাণ খুব বেশি। 

তিনি আরো বলেন, মাল্টা চাষাবাদে আগ্রহ বাড়াতে চাষিদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তার পরেও মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা বাগানে বাগানে গিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এই মাল্টা বাজারে বিক্রির উপযুক্ত সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর শেষ থেকে অক্টোবরে মধ্যকালীন সময়ে। সে জন্য মাল্টা পরিপক্ষ হলেই বাজারজাত করার পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা। 

তিনি আরো বলেন, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৯ শ মাল্টা বাগান থেকে ২ হাজার ৪৫৩ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি এ বছর ২৭ কোটি টাকার মাল্টা বিক্রি হবে। প্রতি বছরই মাল্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।