শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৈকতে পর্যটকদের বিনোদন দিচ্ছে ঘোড়া

প্রকাশিত : ০৪:১৫ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার

সৈকতে-পর্যটকদের-বিনোদন-দিচ্ছে-ঘোড়া

সৈকতে-পর্যটকদের-বিনোদন-দিচ্ছে-ঘোড়া

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্ট ছাড়াও ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক ও দরিয়ানগরে প্রায় ১২০টি ঘোড়ার বিচরণ রয়েছে। এসব ঘোড়ায় চড়ে পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। ঘোড়াকে কেন্দ্র করে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ এই ঘোড়া ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত রয়েছে। 

কক্সবাজার ঘোড়া ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৭। এদের সবার ঘোড়া রয়েছে ৭০টি। এদের মধ্যে ৩০টি ঘোড়া বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বাকি ৪০টি ঘোড়া সৈকতে পর্যটক চড়িয়ে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে। সমিতির বাইরে ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো অন্তত ৫০টি ঘোড়া রয়েছে। 

ঘোড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, সৈকতে ঘোড়া টেনে জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। সারাদিন ঘোড়া টেনে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে শুধু ঘোড়ার খাবার কিনতে চলে যায়। একটি ঘোড়ার খাবারের জন্য প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা দরকার হয়৷ সারাদিন ঘোড়া টেনে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ১ হাজার -১২০০ টাকা।  সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার সৈকতে কিছুটা পর্যটক থাকে ওই সময় কিছু টাকা ইনকাম হয়। সপ্তাহের পাঁচদিন টানাটানিতে চলে তাদের সংসার। 

অনেকে ঋণ নিয়ে ঘোড়া কিনেছেন, প্রতি সপ্তাহে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। ঘোড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, সৈকতে ঘোড়া টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোড়ার জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করতে পারবেন তারা।

সৈকতে ঘোড়া ব্যবসায়ী মো. তারেক  বলেন, এক সময় আমার ঘোড়া ছিল ১৭টি। ঘোড়ার খাবার দিতে না পারায় করোনাকালে আমার ৮টি ঘোড়া মারা যায় টাকার অভাবে আরো ৬টি ঘোড়া বিক্রি করে দিয়েছি। এখন তিনটি ঘোড়া আছে তাদের খাবার দিতেও কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ৪ মাস ধরে বিচে পর্যটক কম। সারাদিন ঘোড়া টেনে যে টাকা পাওয়া যায় তা দিয়ে ঘোড়ার খাবারের খরচও আসে না। 

ঘোড়া মালিক নুরুল আলম বলেন, এক সময় রিকশা চালাতাম, রিকশা চালানো কষ্ট হয়ে যাওয়ায় চার বছর আগে ঘোড়া নিয়েছিলাম। প্রথমে ভালোই চলছিল, ইদানিং এ ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। দৈনিক আয় ১ হাজার টাকা হলে ৫০০-৬০০ টাকা শুধু ঘোড়ার খাবারে চলে যায়। বাকি সামান্য টাকায় আমার ছেলেদের পড়াশোনার খরচ এবং সংসার চলে না। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সহযোগিতা করা গেলে উপকৃত হতাম। 

ঘোড়া মালিক রোজিনা আক্তার জানান, আমার ঘোড়া আছে ১১টি। গত ছয়মাস আগেও এক বস্থা ভুষি কিনেছি ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকায়, সেই ভুষির দাম এখন ১৯০০ টাকা। ঘোড়ার পেছনে খরচ বেড়ে গেছে।  

কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদা বেগম জানান, ঘোড়া ব্যবসায়ী সমিতিতে ২৭ জন সদস্য আছে। সবার ঘোড়া আছে ৭০টি। সমিতির বাইরে ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো অন্তত ৫০টি ঘোড়া রয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক মানুষ এই ঘোড়া ব্যবসাকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। 

ফরিদা আরো জানান, বর্তমানে ঘোড়া ব্যবসায় খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। আমার ৩টি ঘোড়ার জন্য প্রতিদিন ২৭শ টাকা মতো খরচ যায়। সরকারের কাছে ঘোড়ার জন্য কিছু খাবার সহযোগিতা হিসেবে চাই।

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে একটি আকর্ষণীয় বিনোদনের মাধ্যম হলো ঘোড়া। এই ঘোড়াগুলোর মাধ্যমে কক্সবাজারে আগত দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। ঘোড়াগুলোর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন, বিশেষ করে ঘোড়া মালিকরা এখন কষ্টে দিনাতিপাত করছে, এনজিওরা চাইলে এসব ঘোড়া মালিকদের সহযোগিতা করতে পারে।  

কক্সবাজারের ডিসি মো. মামুনুর রশীদ জানান, করোনাকালে সব বিষয়ে একটি বিশেষ পরিস্থিতি ও সংকটময় ছিল। সরকার নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল। এখনতো পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এ মূহুর্তে করোনার বিশেষ সংকটময় পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে, এখন কেউ যদি কোনো কথা বলে, সেটি কতটা বাস্তব সম্মত তাও বিবেচনায় নিতে হবে।