ভেজা চোখে ফেদেরারের বিদায়, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর পাশে বসে কাঁদলেন নাদালও
প্রকাশিত : ১১:৩০ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার
ভেজা-চোখে-ফেদেরারের-বিদায়-চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর-পাশে-বসে-কাঁদলেন-নাদালও
যে নাদালের সঙ্গে কোর্টে আগুনে লড়াই করেছেন এতগুলো বছর, তাকে সঙ্গে নিয়ে শেষ লড়াইটা জিতে মধুর সমাপ্তি ঘটাবেন ফেদেরার, এমনটাই ভেবেছিলেন সবাই। দুঃখজনকভাবে তা হয়নি।
টিম ইউরোপের হয়ে দ্বৈত জুটি হিসেবে নামা ফেদেরার ও নাদাল হেরেছেন টিম ওয়ার্ল্ডের জুটি ফ্রান্সিস তিয়াফো ও জ্যাক সকের কাছে। ৪-৬, ৭-৬ (৭ /২), ১১-৯ গেমের হারে শেষটা রাঙাতে পারেননি ফেদেরার। তাতে টেনিসভক্তদের অতৃপ্তি থাকার কথা নয়।
অতৃপ্তি বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটি ২০টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সুইস কিংবদন্তিকে আর কখনো কোর্টে দেখতে না পাওয়ার অনুভূতি। হারের পর বিদায়ী ভাষণে তা মনে হতেই সম্ভবত চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ফেদেরার। কেঁদেছেন শিশুর মতো। পাশে বসে থাকা রাফায়েল নাদালের চোখও ভিজে এসেছে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা নোভাক জোকোভিচের মুখেও তাকানো যাচ্ছিল না। টেনিসের ‘বিগ ফোর’–এর আরেকজন অ্যান্ডি মারেও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
কান্নাভেজা চোখে, বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে রজার ফেদেরারকে বলে বোঝাতে হলো, তার খারাপ লাগছে না। বরং আজ তিনি সুখী। এই কান্না আসলে আনন্দাশ্রু!
ক্যারিয়ারের সেরা এসব প্রতিদ্বন্দ্বীকে পাশে নিয়েই ফেদেরার তার বিদায়ী ভাষণে আবেগ সামাল দিতে পারেননি। বললেন, আমরা এটা (দুঃখের সময়) কাটিয়ে উঠব। দিনটা দারুণ। সবাইকে বলেছি, আমি সুখী। খারাপ লাগছে না। শেষবারের মতো নিজের জুতার ফিতা বাঁধা উপভোগ করেছি। সবকিছুই ছিল শেষবারের মতো।
২০২১ উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালের পর চোটের কারণে আর কোর্টে নামতে না পারা ফেদেরার গত সপ্তাহে অবসরের ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই তার এই বিদায়ী ম্যাচের অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। নীল জার্সিতে কোর্টে নামা ফেদেরারের বিদায়ী মুহূর্তটাও যেন হয়ে ওঠে বেদনার প্রতীক। নীল তো বেদনারই রং! সেই রঙের জার্সি পরেই টেনিস ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কে বিদায় জানালেন টিম ইউরোপে তার কিংবদন্তি সতীর্থরা—নাদাল, জোকোভিচ, মারে।
লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় ফেদেরারের চোখে পানি দেখে গ্যালারিতেও অনেকের চোখ ভিজেছে। তবে সংবাদ সম্মেলনে সমর্থকদের জন্য খুশির খবর দিয়েছেন ৪১ বছর বয়সী কিংবদন্তি। বলেছেন, এখানেই সবকিছুর শেষ নয়; জীবন জীবনের মতোই এগিয়ে চলবে। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। একটি বার্তা দিতে চাই, খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে। ভক্তদের জানাতে চাই, আবারও দেখা হবে, বিশ্বের অন্য কোথাও, আলাদা কোনো টেনিস কোর্টে। তবে কবে, কোথায়, কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। এমন সব জায়গায় গিয়ে খেলতে চাই, যেখানে আগে কখনো খেলিনি। সামনের বছরগুলোয় শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে যেতে চাই সবাইকে, যাঁরা এত দিন ধরে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।
অর্থাৎ পেশাদার টেনিস ছাড়লেও ফেদেরারকে হয়তো মাঝেমধ্যে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে দেখা যাবে। বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার রাতে পেশাদার ক্যারিয়ারে নিজের শেষ ম্যাচটা ফেদেরার খেলে ফেলার পর নাদালও টের পাচ্ছেন, তার জীবন থেকে কী মুছে গেল!
২০০৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টেনিসের কোর্টে ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছেন দুজন। তাদের যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তেমনি একে অপরের প্রতি সম্মানও কম নয়। ২০১৭ সালে প্রাগের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো একসঙ্গে খেললেন দুই কিংবদন্তি। এবারই শেষ, আর এই শেষের ব্যথা বাজছে নাদালের বুকেও।
ফেদেরারের শেষ ম্যাচকে টেনিস ইতিহাসেরই অনন্য এক মুহূর্ত মনে করে নাদাল বলেছেন, আমাদের এই খেলার ইতিহাসে অনন্য এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারাটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবন থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়েরও অবসান ঘটা।
পরিবারকে গ্যালারিতে রেখেই নিজের শেষ ম্যাচটা খেললেন ফেদেরার। আর কোর্টে ছিলেন তার ক্যারিয়ারে বিভিন্ন সময়ের সেরা প্রতিপক্ষরা। আপাদমস্তক ভদ্রলোক ফেদেরারও চলে যাওয়ার আগে ভদ্রতাটুকু দেখাতে ভোলেননি, রাফার সঙ্গে একই দলে খেলা এবং বাকিদেরও কাছে পাওয়া, যেসব কিংবদন্তি এখানে আছে...ধন্যবাদ।
ফেদেরারের এই ধন্যবাদের উত্তরে অনুচ্চারে সবাই হয়তো এ কথাই বলেছেন, যেয়ো না রজার। তোমার মতো কেউ আর আসবে না!