ঘুরে আসুন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য রামুর রাবার বাগান
প্রকাশিত : ১০:৫৫ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার
ঘুরে-আসুন-বঙ্গবন্ধুর-স্মৃতিধন্য-রামুর-রাবার-বাগান
কক্সবাজার থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে রাবার বাগানের অবস্থান। এটি একটি আদর্শ পিকনিক স্পষ্টও। সারাবছর নিরাপদ ভ্রমণের উপযোগী একটি জায়গা। সারি সারি রাবার বাগানে ঢুকলে মন হারিয়ে যায় সবুজের সমারোহে। যতই ভেতরে ঢুকবেন ততই যেন বিশালতা মুগ্ধ করবে আপনাকে। সে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর সৌন্দর্য। নিবিষ্ট মনে প্রকৃতিতে অবগাহন করতে করতে কখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে টেরও পাবেন না।
১৯৬০ সালে বন বিভাগ অনাবাদি জমি জরিপ করে পরীক্ষামূলকভাবে রাবার উৎপাদনের জন্য ৭১০ একর ভূমিতে রাবার চাষের একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের রাউজানে ১০ একর এবং বড় পরিসরে কক্সবাজারের রামুতে ৩০ একরে বাগান করা হয়। পরে ১৯৬২ সালে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বনশিল্প করপোরেশনের কাছে রাবার চাষের প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যস্ত করা হয়।
বর্তমানে দুই হাজার ৬৮২ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত বাগান। রাবার বাগানে বর্তমানে উৎপাদনক্ষম গাছ রয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার। এসব গাছ থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদন হয়। প্রতিদিন দুই হাজার কেজি রাবার উৎপাদন করা হয় বাগানের কারখানায়। কারখানার পাশেই দুটি কোয়ার্টার। এখানেই থাকেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। উল্টো পাশে পাহাড়ের ওপরে রয়েছে আনসার ক্যাম্প। দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক আসেন এই বাগান দেখতে। বাগানে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন রেস্টহাউস। বাগানের মাঝখান দিয়ে একটি রাস্তা। হাঁটার সময় মনে হয় বিদেশের অত্যন্ত পরিপাটি সাজানো-গোছানো দৃষ্টি নন্দন কানন । , কার্বন শোষণ ও মাটির ক্ষয়রোধের মাধ্যমে রাবার বাগান পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। প্রাকৃতিক কাঁচা রাবার আমদানির কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যে বলছে রাবার গাছ রোপণের পর সাত বছর পরিচর্যা শেষে অষ্টম বছরে শুরু হয় উৎপাদন। একটি গাছ ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার কষ উৎপাদন করে। ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো অর্থনৈতিক জীবনচক্র হারায়।
বাগানে ঢুকতে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। তবে রাবার কষ প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় ঢুকতে অনুমতি নিতে হয়। কারখানার ভেতরেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অফিস। বাইরে দায়িত্বরত আনসার সদস্যকে বললে তিনি অফিসে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। অফিসে বললে তারাই প্রয়োজনীয় অনুমতির ব্যবস্থা করেন। কারখানায় ঝোলানো অরিজিনাল রাবার আছে। চাইলে ধরেও দেখতে পারেন। তবে রাবার প্রক্রিয়াকরণ চুল্লির কাছে যাবেন না। চুল্লিতে সব সময়ই আগুন থাকে, পা ফসকে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মন চাইলে কতৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে রেষ্ট হাউসে বিশ্রাম নিতে পারেন। সেই রেষ্ট হাউসে আছে আয়না ঘরে রাখা আছে বঙ্গবন্ধুর আসন গ্রহন করা ঐতিহাসিক সোফা। ১৯৭৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার ভ্রমনে এসে বিমান থেকে সোজা চলে আসেন তার পছন্দের জায়গা রামুর রাবার বাগানে।বাগানে ঢুকেই তিনি মাটিতে পড়ে থাকা রাবার কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। কতৃপক্ষ কে বলছিলেন ভালো রাবার ১০ টাকা হলে মাটিতে পড়ে থাকা রাবার অন্তত ৫ টাকায় বিক্রি করা যাবে। তারপর সেখান থেকে রেষ্টহাউসে। তিনি রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙ্গে সর্বসাধারণের সাথে খোলামেলা কথা বলতেন।অনেকের নাম ধরে ও ডাকতেন।প্রখর মেধা সমপন্ন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বসে যান সাদামাটা এক সোফায়। ১৯৭০ সালে ও তিনি একবার এই রেষ্টহাউসে উঠেছিলেন।জানাগেছে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তানুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য সেই সোফা সেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতি বছর রামুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় এই সোফাটি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই পুরো ইতিহাস বর্ণনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর সহচর রামুর গোলাম কবির।
রাবার কষ আহরণের সময়
সাধারণত শীতকালে রাবার কষ উৎপাদন বেশি হয়। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি কষ আহরণের উত্কৃষ্ট সময়। বর্ষাকালে কষের উৎপাদন কমে যায়। গ্রীষ্মকাল থেকে অল্প পরিমাণে বাড়তে থাকে। সপ্তাহে এক দিন রাবার কষ সংগ্রহ করা হয়। পাহাড়ি ও সমতলের লোকেরা মজুরির ভিত্তিতে কষ সংগ্রহ করে কারখানায় এনে প্রক্রিয়া করার জন্য জমা করেন।
সতর্কতা
বাগানের ভেতরে কোনো দাহ্য পদার্থ, বিড়ি-সিগারেট বা দিয়াশলাইজাতীয় দ্রব্য না নেওয়াই ভালো। শীতকাল ও বসন্তকালে পরিবেশ ও ঝরাপাতা এতই শুকনো থাকে যে সামান্য অসাবধানতায় পুরো প্রকৃতি নিঃশেষ করে দিতে পারে। বাগানে যত্রতত্র ময়লা ফেলা নিষেধ।
কীভাবে যাবেন
কক্সবাজার থেকে ইজিবাইক, বাস, সিএনজি ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত বাহনে রামু রাবার বাগানে আসা যায়। অথবা রামু চৌমুহনী থেকে ২ কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পাশেই চোখে পড়বে নয়নাভিরাম রাবার বাগান ও রাবার কষ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা।