বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার ‘রহস্য’ ফাঁস

প্রকাশিত : ০৫:৩০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

লিওনেল-মেসির-বার্সেলোনা-ছাড়ার-রহস্য-ফাঁস

লিওনেল-মেসির-বার্সেলোনা-ছাড়ার-রহস্য-ফাঁস

সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০২১ সালে বার্সেলোনা ছাড়েন লিওনেল মেসি। সম্প্রতি পুনরায় তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা শুরু করেছে কাতালান ক্লাবটি। কিন্তু বার্সার সঙ্গে লিওনেল মেসির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক কেনো ছিন্ন হয়েছিল তা অনেকেই জানেন না।

গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে অনেক কথাই চাউর ছিল। প্রচার ছিল মেসি কম বেতনেও বার্সেলোনাতে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়মের দোহাই দিয়ে বার্সেলোনা সভাপতি লাপোর্তে রাখতে রাজি হননি। 

মেসির বার্সা ছাড়ার সোয়া এক বছর পর স্প্যানিশ পত্রিকা এল মুন্দো সম্ভাব্য সেই চুক্তির খুঁটিনাটি অনেক কিছু প্রকাশ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, চুক্তি নবায়নে বার্সেলোনাকে ৯টি শর্ত দিয়েছিলেন সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী আর্জেন্টাইন তারকা।

এর মধ্যে ছয়টিই কাতালান ক্লাবটি মেনে নিয়েছিল। বাকি তিনটির দুটিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেও একটি প্রস্তাব মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়। কিন্তু মেসি ও তার পরিবারের আপত্তি ছিল ওখানেই। শেষ পর্যন্ত এরপর আর চুক্তিটি হয়নি।

২০২০ সালে চুক্তি নবায়নের জন্য মেসি যে ৯টি শর্ত দিয়েছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া গেছে মেসির বাবা ও এজেন্ট হোর্হে মেসি, তার আইনজীবি জর্জ পেকোর্ট, বার্সা প্রেসিডেন্ট জোসেফ বার্তামেউ ও বার্সা সিইও স্কার গ্রাউয়ের মধ্যকার মেইল চালাচালির সূত্রে।

এল মুন্দোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ৪ মে মেসির বাবাকে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাবপত্র পাঠান তৎকালীন বার্সা প্রেসিডেন্ট জোসেফ মারিয়া বার্তামেউ। যেখানে বলা হয়, চুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর, এরপর প্রতিবছরই এটা বাড়তে থাকবে যদি না ৩০ এপ্রিলের মধ্যে মেসি চলে যাওয়ার কথা বলেন।

এক সপ্তাহ পর মেসির আইনজীবী জর্জ পেকোর্ট বার্তামেউ, গ্রাউ ও বার্সার আইন বিভাগের প্রধান র‌্যামন গোমেজ-পন্টির উদ্দেশে একটি ই-মেইল পাঠান। বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে মেসি যে ৯টি শর্ত দিয়েছিল তা হলো-

১. নতুন চুক্তি হবে ৩ বছরের।

২. কর্তিত বেতন সুদসহ ফেরত: কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০-২১ মৌসুমে ২০ শতাংশ বেতন কমানো হয়েছিল মেসিসহ সব ফুটবলারের। মেসির দাবি এর পুরোটাই ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে ২০২১-২২ মৌসুমে ১০ শতাংশ, ২০২২-২৩ মৌসুমে বাকি ১০ শতাংশ। শুধু বেতনের কেটে নেয়া অংশই নয় এর সঙ্গে ৩ শতাংশ সুদও দিতে হবে।

৩. নিজের ও সুয়ারেজের পরিবারের জন্য ক্যাম্প ন্যুতে প্রাইভেট বক্স।

৪. ক্রিসমাসের ছুটিতে পুরো পরিবার নিয়ে আর্জেন্টিনায় যাতায়াতের জন্য দিতে হবে প্রাইভেট বিমান।

৫. চুক্তি নবায়নের জন্য ১০ মিলিয়ন ইউরো বোনাস প্রদান করতে হবে।

৬. রিলিজ ক্লজের ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা: ২০১৭ সালে করা সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী মেসির রিলিজ ক্লজ ছিল ৭০ কোটি ইউরোর কাছাকাছি। নতুন চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ একেবারে কমিয়ে আনার শর্ত দেন তিনি। ‘কমিয়ে আনা’ বলতে প্রায় বিলুপ্ত করে দেয়া। ৭০ কোটি ইউরো থেকে মাত্র ১০ হাজার ইউরো। অর্থাৎ চুক্তি থাকাবস্থায় কোনো ক্লাব চাইলে যেন বার্সাকে ১০ হাজার ইউরো দিয়েই নিয়ে যেতে পারে।

৭. বেতন বৃদ্ধি: স্পেন সরকার করের হার বাড়ানোয় বেতন বাবদ আয় কমে যাচ্ছিল মেসির। এ জন্য তিনি বেতন বৃদ্ধির দাবি করেন যাতে কর পরবর্তী আয় আগের চেয়ে কম না হয়।

৮. ব্যক্তিগত সহকারীর চুক্তি নবায়ন: বার্সেলোনায় মেসির ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন পেপে কস্তা। বার্সেলোনা যার যেতন পে-রোলে প্রদান করত। ক্লাবের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে তার কাজ বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল বার্সেলোনা বোর্ডের। মেসি শর্ত দেন কস্তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে হবে।

৯. ভাইয়ের জন্য কমিশন: মেসির ভাই রদ্রিগো বার্সেলোনার সঙ্গে কাজ করতেন ফুটবলারদের এজেন্ট হিসেবে। ওই সময় আনসু ফাতির এজেন্ট ছিলেন তিনি। মেসির শর্ত ছিল তার ভাইয়ের সঙ্গেও চুক্তি নবায়ন করতে হবে।

এই শর্তগুলোর মধ্যে রিলিজ ক্লজ কমানো এবং চুক্তি নবায়ন বাবদ এক কোটি ইউরো বোনাসের শর্ত মানতে রাজি হননি বার্সা প্রেসিডেন্ট। এছাড়া বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয় ক্লাবের আয় ১১০ কোটি ইউরো পার হওয়ার পরই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। যেহেতু বার্সেলোনা তখন আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।

শেষ পর্যন্ত বার্সায় আর থাকতে চাননি মেসি ও তার পরিবার। যার ফলে ওই বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে ক্লাবের কাছে বুরোফ্যাক্স পাঠান মেসি, যেখানে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানান। তখন বার্তামেউ ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই জানালে আরো এক মৌসুম ক্লাবে থেকে যান লিও।