বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের জীবনবীমা ৩১টি, কিস্তি দিতেন পার্থ

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

অর্পিতা-মুখোপাধ্যায়ের-জীবনবীমা-৩১টি-কিস্তি-দিতেন-পার্থ

অর্পিতা-মুখোপাধ্যায়ের-জীবনবীমা-৩১টি-কিস্তি-দিতেন-পার্থ

অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ৩১টি জীবনবীমা ছিল। এগুলোর কিস্তি পরিশোধ করতেন সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র হাতিয়ার হলো জীবনবীমা প্রিমিয়াম বা কিস্তির রসিদ। 

অর্পিতার নামে সম্মিলিত ৩১টি জীবনবীমার প্রিমিয়ামের পরিমাণ হলো দেড় কোটি টাকা। সেই অর্থের পুরোটাই দিতেন সাবেক মন্ত্রী বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে থাকা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সেলফোন বাজেয়াপ্ত করে ইডি। তারপর তা ফরেনসিকে পাঠানো হয়। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ডিলিট করা মেসেজ খুঁজে বের করেন। সেখান থেকে দেখা যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় অর্পিতার ৩১টি বিমা পলিসির প্রিমিয়াম দিতেন। তারপর ব্যাংকে গিয়ে সেই তথ্য যাচাই করেন ইডি কর্মকর্তারা।

দেখা যায়, ২০১৫ সালে পলিসিগুলো করা হয়। সাত বছর ধরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রিমিয়াম দিয়েছেন। অধিকাংশ পলিসিতে পার্থকেই নমিনি করা হয়েছে। 
তবে এতগুলো বীমা পলিসি কেন, তার জবাব অবশ্য ইডির চার্জশিটে নেই। কিন্তু এ তথ্য দিয়ে ইডি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, পার্থর সঙ্গে অর্পিতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। জেরার সময় পার্থ বলেছিলেন, অর্পিতার সঙ্গে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ নয়।

মোট ১৭২ পাতার চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। সেইসঙ্গে তারা ট্রাঙ্কে ভরে নথিপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। চার্জশিটে উল্লেখ আছে, অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে তল্লাশি চালিয়ে ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৫ কোটি ৮ লাখ টাকার অলঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে।

এছাড়া বেশ কিছু ফ্ল্যাট, বাগানবাড়ি, জমি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। সবমিলিয়ে পার্থ ও অর্পিতার নামে থাকা ১০৩ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ কোটি টাকার।

ইডির অভিযোগ এসএসসি দুর্নীতি এবং, চাকরি বিক্রির টাকায় এ সম্পত্তি কেনা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। শতাধিক ভুয়া সংস্থার মাধ্যমেও লেনদেন হয়েছে বলে ইডির অভিযোগ। অনেকের নামে সংস্থা খোলা হয়েছে। তাদের সামান্য কয়েক হাজার টাকা দেওয়া হত। তারা যে সংস্থার ডিরেক্টর সেটাই জানতেন না বলে ইডির কাছে জানিয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদি সিবিআইসহ তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহার করছেন, তা তিনি বিশ্বাস করেন না। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এসব বিজেপির নেতারা করাচ্ছেন। সিবিআই আগে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ছিল। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে আছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথাগুলো বলেছেন রাজ্য বিধানসভায়। সেখানে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অতিসক্রিয়তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের আনা প্রস্তাব ১৮১-৬৪ ভোটে অনুমোদিত হয়েছে। সেখানেই মমতা ইডি নিয়ে বলেন, সকাল-বিকেল নোটিশ দিচ্ছে। মাঝরাতে বাড়ি চলে যাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এরা ডিক্টেক্টর। হিটলার-স্ট্যালিন-মুসোলিনি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি সম্মান করি। আপনি এদের সামলান।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ মন্তব্য নিয়ে সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বলেছেন, মোদি দেশে গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেছেন। তাকে তো মুখ্যমন্ত্রীর ভালো লাগবেই। পশ্চিমবঙ্গে তো উনি এভাবেই চলেন। রাজ্যবিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, মোদি জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেন। তাই মমতা ও তার ভাইপো বাঁচতে পারবেন না।

বাম ও কংগ্রেসের নেতারা বলেছেন, চিরকালই মমতা ভালো বিজেপি ও খারাপ বিজেপি- এই নীতি নিয়ে চলেন। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তিনি বাঁচতে চাইছেন।