বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চারদিকে আজ ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’

প্রকাশিত : ০৮:৩০ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার

চারদিকে-আজ-বাংলাদেশ-বাংলাদেশ

চারদিকে-আজ-বাংলাদেশ-বাংলাদেশ

বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে জায়গা করে নিলো ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ। যতদিন এই দেশ থাকবে, ততদিন ক্রীড়ামোদি মানুষরা এই দিনটিকে মনে রাখবে সুখের সঙ্গে। যে উপলক্ষ্যটা তৈরি করে দিয়েছেন দেশের নারী ফুটবলাররা। 

আজ যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মেয়েদের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার টুর্নামেন্ট সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছেন সাবিনা-কৃষ্ণারা। বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো জয় করলেন দক্ষিণ এশিয়া। এই দিনটা কী করে ভুলবেন সবাই?

ভুটানকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে নাম লেখানোর পর থেকেই শুরু হয় এই ম্যাচ নিয়ে আলোচনা। দেশের প্রতিটি মানুষের দৃষ্টি চলে যায় কাঠমান্ডুতে। একজন সাধারণ ফুটবল দর্শক থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত, এই ম্যাচ নিয়ে শুভকামনার পর শুভকামনা জানাতে থাকেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল এক দল প্রবাসী বাংলাদেশি। যদিও তাদের সংখ্যা ছিল স্বাগতিক নেপালের সমর্থকদের তুলনায় অনেক কম। তবু মাঠ জুড়ে যেন কেবল বাংলাদেশের চিৎকারই শোনা গেলো ১৪ মিনিটের পর থেকে। 

মেয়েরা গোল দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পর চওড়া চয়ে যায় বাংলাদেশিদের কণ্ঠ। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠে স্টেডিয়াম। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কল্যাণে এই ম্যাচটি সরাসরি দেখতে পেরেছেন ক্রীড়াপাগল মানুষরা। যদিও কারিগরি ত্রুটির কারণে ঠিক মতো খেলা দেখা যায়নি। তবুও সেখানে দেখা গেছে অন্যরকম উত্তেজনা।

প্রথম মিনিট থেকে নেপালের ওপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন সাবিনা, স্বপ্না, সানজিদা ও কৃষ্ণারা। প্রথম মিনিটেই গোল পেয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। ১০ মিনিটে দুঃসংবাদের ইঙ্গিত এসেছিল স্বপ্না মাঠের বাইরে গেলে।

কিন্তু সেই দুঃসংবাদকে পাশ কাটান স্বপ্নার বদলি নামা শামসুন্নাহার জুনিয়রই। বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন ১৪ মিনিটের মাথায়। ৪১ মিনিটে কৃষ্ণা রানী সরকার দ্বিতীয় গোল করার পর ম্যাচটি ঝুলে যায় বাংলাদেশের দিকে। তবে নেপাল সহজে দমে যাওয়ার দল না। ঘরের মাঠে খেলা।

মরণ কামড় দিয়ে ৭০ মিনিটে ব্যবধান কমিয়েছিল নেপাল। যদিও ম্যাচে তারা আর ফিরতে পারেনি। ৭৭ মিনিটে বাংলাদেশের কৃষ্ণা যখন নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৩-১ গোলে এগিয়ে দেন, তখন চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল শুধু সময়ের ব্যপার।

টিভির সামনে লাখো মানুষের দাপাদাপি ছিল যখন, শেষ দিকে কারিগরি ত্রুটিতে খেলা দেখা যাচ্ছিল না। নেপালে থাকা সাংবাদিকদের ফোন করে ম্যাচের আপডেট জানা ছাড়া আর উপায় ছিল না। এভাবেই কেটে গেলো বাড়িয়ে দেওয়া চার মিনিট সময়।

শেষ বাঁশি বাজার পর কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে যে স্লোগান শুরু হলো, তা আছড়ে পড়লো বাংলাদেশের আনাচে কানাচেও।

২০০৩ সালে বাংলাদেশের ছেলেরা প্রথম জিতেছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই টুর্নামেন্ট। তারপর বাংলাদেশ আর একবার ফাইনাল খেলতে পেরেছিল মাত্র। সর্বশেষ আসরগুলোতে পারেনি না গ্রুপপর্ব টপকাতেই। ছেলেদের ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকার মধ্যেই মেয়েরা আনলো ঐতিহাসিক সাফল্য।