“তোমরা জিতলেই জিতে যায় বাংলাদেশ” খেলার আগে সানজিদার আবেগঘন পোস্ট
প্রকাশিত : ১১:৩০ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার
তোমরা-জিতলেই-জিতে-যায়-বাংলাদেশ”-খেলার-আগে-সানজিদার-আবেগঘন-পোস্ট
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়েছে। আর সেমিফাইনালে ভুটানকে গুনে গুনে ৮ গোল দিয়েছে। ফাইনালে ওঠার আগে চার ম্যাচে সব মিলিয়ে ২০ গোল দিয়েছে সাবিনারা। এই ফাইনালে যেই দল জিতুক, তারা প্রথমবার সাফ ট্রফির স্বাদ পাবে।
সোমবার কাঠমান্ডু দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া পাঁচটায় শুরু হবে।
নেপালের বিপক্ষে সানজিদারা কখনো জেতেননি। ফাইনালে স্বাগতিকদের হারিয়ে টুর্নামেন্টের ট্রফি জিততে চান বাংলাদেশের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তিনি বলেন, ‘শেষ চারটি ম্যাচ মেয়েরা দুর্দান্ত খেলেছে। তারা মানসিক ও ফিজিক্যালি ফিট ফাইনালের জন্য। দুই দিনে ঠিক করেছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হবে। কারণ নেপাল খুবই শক্তিশালী দল; ফিজিক্যালি, টেকটিক্যালি।’
আর ফাইনালের ঠিক আগেই বাংলাদেশের হয়ে লড়ে যাওয়া ফুটবলার সানজিদা আক্তার একটা আবেগঘন স্টেটাস দেন তার নিজের ফেইসবুকে। তার লেখার মূল কথা হলো আজ ম্যাচ জিততে হবে। এই ম্যাচে জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সকল আলোচনা সমালোচনার জবাব দিতে চান সানজিদারা। এরই মধ্যে তার এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও হয়।
সানজিদা লিখেন ‘২য় বারের মতো সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। প্রথমবার ফাইনাল খেলেছি ২০১৬ সালে। সেবার ভারতের বিপক্ষে আমরা হেরে যাই। ৫ বার সাফের মঞ্চে এসে ১ বার রানার্সআপ, ৩ বার সেমিফাইনাল এবং ১ বার গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছি আমরা।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এবার মাঠে দারুণ ছন্দে রয়েছি, ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। স্বাগতিক হিসেবে ফাইনাল খেলা কিংবা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলা সবসময় রোমাঞ্চকর। এছাড়াও এবারের ফাইনাল ম্যাচটি কিছুটা ভিন্ন। বহুদিন পর সাফ পাবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেশ। আর তাই এবার রোমাঞ্চকর একটি ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি আরো লিখেন, বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিলো বাংলাদেশ। এখনো আমরা সেই গল্প শুনি। বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।’
তার লিখায় উঠে আসে সব বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে চলার কথা।
তিনি লিখেন, ‘যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনী কে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরো নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।
পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়িদে ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয় - পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্ঠায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’
তোমাদের সঙ্গে আমরা গলা মিলিয়ে বলতে চাই, তোমরা এগিয়ে আসছো বলেই, আমরা এগোতে পারছি। যাদের এগোতে ভয় তারাই পর্দা এবং সমাজের দোহাই দেয়। টিপ্পনী জয় যারা করে তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়। শুভ কামনা তোমাদের জন্য।