সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেখে আসুন রাঙ্গামাটির কলাবাগান ঝরনা

প্রকাশিত : ১২:৫৫ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ রোববার

দেখে-আসুন-রাঙ্গামাটির-কলাবাগান-ঝরনা

দেখে-আসুন-রাঙ্গামাটির-কলাবাগান-ঝরনা

পাহাড়ের বুকে ঠান্ডা পানির শীতল ধারা মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় ভ্রমণ পিপাসুর চোখে। হৃদয়ে লাগে দোলা। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম পছন্দ পাহাড়ি ঝিরি-ঝরনা। পাহাড়ের বুকে রূপ ছড়ানো ঝরনাগুলোর মধ্যে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ঝরনাটি অন্যতম। যা সবার কাছে ‘কলাবাগান’ ঝরনা নামে পরিচিত। প্রতিদিনই এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে।

পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটির প্রবেশদ্বার কাউখালী উপজেলা। চট্টগ্রামের রাউজান সীমানা পেরুলেই কাউখালীর অবস্থান। রাউজান ও রাঙ্গুনীয়ার সীমান্ত ঘেঁষা কাউখালী বেশ বৈচিত্র্যময়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের সহ-অবস্থান চোখে পড়ার মতো। এ উপজেলার মানুষের উপার্জনের কেন্দ্রে রয়েছে পর্যটন ও কৃষি।

চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া সেনাক্যাম্প পার হলেই কলাবাগান। মূল সড়ক থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে অন্তত পাঁচটি প্রাকৃতিক ঝরনা। ঝরনাগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমতল থেকে স্তরে স্তরে অন্তত দেড় থেকে দুইশো ফুট উঁচুতে পর্যন্ত বহমান। প্রতিটি ঝরনারই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। সৌন্দর্যের দিক থেকে কেউ কাউকে যেন বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি নয়! যা স্বচক্ষে না দেখলে কারো বিশ্বাসই হবে না। এসব ঝরনা পর্যটন নগরী রাঙ্গামাটির সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকার একটি চায়ের দোকানের বাঁ-পাশ ঘেঁষে ঝরনায় পৌঁছানোর রাস্তা শুরু হয়। পরিষ্কার পানির প্রবাহের সঙ্গে ছোট ছোট অসংখ্য নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যেতে হয় সবচেয়ে বড় ঝরনাটির দিকে। যাওয়ার পথে চারদিকে দেখা মিলবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড়ি ছড়া, পাহাড় এবং সবুজে ঢাকা প্রকৃতি। কিছু পথ পারি দেওয়ার পরই রয়েছে পিচ্ছিল ছড়া। পিচ্ছিল ছড়া সঙ্গে পানি প্রবাহ অতিক্রম করেই কয়েক ধাপ পর হওয়ার পর দেখা মিলবে সবচেয়ে বড় ঝর্ণাটির। সমতল থেকে বড় ঝর্ণাটি অন্তত দেড় থেকে দুইশ ফুট উঁচু হবে।

অপার সম্ভাবনাময় প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া অপরূপ দৃশ্য ও সৌন্দর্যের সমারোহ উপভোগ করতে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দৈনিক অসংখ্য পর্যটকের পদচারণায় নির্জন কলাবাগান এলাকার নীরবতা জাগিয়ে তোলে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সবচেয়ে বড় দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক এ ঝরনাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠতে পারে এখানে বিশাল পর্যটন স্পট। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তার ব্যবস্থা করা গেলে এটিই হয়ে উঠতে পারে অন্যতম পর্যটন অর্থনৈতিক জোন। যা বদলে দেবে কাউখালীর চিত্র।

চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী আমান বলেন, ‘ঝরনাটির দিকে তাকালেই দুই চোখ এবং মন জুড়িয়ে যায়। চারদিকে সবুজের সমারোহ। ঝরনাটি দেখতে আসার সময় আরো চারটি প্রাকৃতিক ঝরনার দেখাও মিলেছে যা ভ্রমণের আনন্দকে আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’ 

রাঙ্গামাটি শহর থেকে ঘুরতে আসা ফাহিম বলেন, ‘মনোমুগ্ধকর ঝরনাটি দর্শনার্থী ও ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এ ঝরনা ঘিরে এখনো কোন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি।’ 

খাগড়াছড়ি থেকে আসা হুমাইরা বলে, ‘ঝরনাটি অত্যন্ত সুন্দর এবং বিশাল। তবে ঝরনার কাছে পৌঁছাতে হলে পানির স্রোতে পা পিছলে পড়ারও সম্ভবনা রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানে কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা নাই। এখানে আসলেই কেমন যেন অজানা এক ভয় বিরাজ করে মনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো।

এই ঝরনাটি রক্ষণাবেক্ষণ, এবং স্থানীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে  অন্যতম একটি নান্দনিক সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

যেভাবে যাবেন: রাঙ্গামাটি শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে পারবেন কলাবাগান ঝরনার কাছে। ভাড়া পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। আবার চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটিগামী যেকোন বাসে করে চলে আসতে পারেন কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের কলাবাগান ঝরনায়। এছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসি ও নন এসি বাসে করে চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় নেমে রাঙ্গামাটির পাহাড়িকা বাস অথবা দ্রুত যান সার্ভিস বাসে করে চলে আসতে পারেন কলাবাগান ঝরনায়।