বান্দরবানের আরেকটু গহীনে কী আছে দেখার মতো
প্রকাশিত : ০৬:৫৫ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার
বান্দরবানের-আরেকটু-গহীনে-কী-আছে-দেখার-মতো
গত পর্বের আমরা বান্দরবানের বেশ কিছু জায়গার বর্ণনা করেছিলাম। সেগুলো ছিল শহরের কিছুটা কাছে। তবে দ্বিতীয় পর্বে যেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে; সেগুলো আরেকটু গহীনে। চলুন দেখে নেয়া যাক-
শৈলপ্রপাত ঝরনা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি শৈলপ্রপাত। বান্দরবান-রুমা এবং থানছি সড়কের ৫ মাইল নামকস্থানে প্রাকৃতিক এই ঝরনার অবস্থান। শহর থেকে শৈলপ্রপাতে যেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১৫মিনিট। শৈলপ্রপাত ঝরনার হিমশীতল পানি সর্বদা বহমান। এখানে পর্যটকদের জন্য স্থানীয় পাহাড়ী বম জনগোষ্ঠীরা কোমর তাঁতে বুনা কাপড়সহ বিভিন্ন পন্যসামগ্রী বিক্রি করে। শহর থেকে চাঁদের গাড়ি এবং সিএনজি ভাড়া নিয়েও শৈল প্রপাতে যাওয়া যায়। অনেকে পাঁয়ে হেটেও শৈল প্রপাতে চলে যায়।
বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়: চিম্বুক পাহাড়ের পরিচিতি রয়েছে সারাদেশে। ইদানিং বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুকের পরিচিতি প্রসারিত হয়েছে বিদেশেও। শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে চিম্বুক পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় তিন হাজার দুইশ’ ফুট।
উঁচূ-নিচু পাহাড় ও বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কের কারণে চিম্বুক পাহাড়টি নাম বাংলার দার্জিলিং নামে পরিচিত। চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশ ও চূড়া ঘিরেই পাহাড়ী মুরুং জনগোষ্ঠীর বসবাস। জেলায় সবকটি উপজেলার সঙ্গে টেলিযোগাযোগের ব্যবস্থা রক্ষার জন্য চিম্বুকে বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড একটি বেইজ স্টেশন ও টাওয়ার স্থাপন করেছে। চিম্বুকের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়। এখান থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। শীত ও বর্ষায় চিম্বুক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মেঘ স্পর্শ করা যায়।
নীলগিরি: নীলগিরি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত নীলগিরি পর্যটন স্পটে হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায়। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা সড়কের ৪৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় নীলগিরি পৌঁছাতে। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড় থেকে থানচি উপজেলা সড়কে আরও ২৬কিলোমিটার। নীলগিরি পর্যটন স্পটে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থাও আছে। নীলগিরিতে গড়ে ওঠা কটেজগুলোও দেখতে বেশ আকর্ষণীয়।
নীল দিগন্ত: বান্দরবান-থানছি সড়কের আকাঁ-বাকাঁ পাহাড়ি রাস্তার ৫২ কিলোমিটার পয়েন্টে জীবন নগর এলাকায় নীল দিগন্ত। এখান থেকে বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ করা যায়। দেশের উঁচু পাহড়ের উপর দিয়ে নির্মিত রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছাতে হয়। চিম্বুক থেকে নীল দিগন্তের দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। নীল দিগন্ত থেকে ছোটবড় অনেক পাহাড় দেখা যায়।
প্রাকৃতিক জলাশয় বগালেক: নীল জলের প্রাকৃতিক জলাশয় কিংবদন্তি বগালেক। পাহাড়ের উপরে সান বাঁধানো বেষ্টনিতে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বগালেকের অবস্থান। এই লেকের পানি দেখতে নীল রঙের। সমুদ্র পৃষ্ট হতে প্রায় দু’তিনশ ফুট উচু পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি বগালেক। বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বগালেক।
রুমা জলপ্রপাত (রিজুক ঝরনা): প্রকৃতির অপরুপ সৃষ্টি রুমা জলপ্রপাত। সব মৌসুমেই সচল রুমা জলপ্রপাতের স্বচ্ছ পানি ঝড়ে পড়ে সরাসরি নদীতে। নদী পথে রুমা থেকে থানছি যাওয়ার পথে রুমা জলপ্রপাতের (রিজুক ঝরনা) এ দৃশ্য চোখে পড়ে। রিজুক, রেমাক্রি ওয়াহ এবং তেছরী প্রপাত-তিন অপরুপা অরণ্য কন্যার নাম। প্রথমটি সহস্র ফুট উঁচু থেকে সাঙ্গু নদীর বুকে ঝড়ে পড়া এক বিশাল ও প্রবল ঝর্ণাধারা। অপর দু’টি জলপ্রপাত।
বড় পর্বত তাজিংডং: বড় পর্বত তাজিংডং (বিজয়) পাহাড়ের উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ট হতে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ ফুট। কেওক্রাডং পাহাড়ের উচ্চতা ৩ হাজার ১৭২ ফুট। দুটি পর্বত চূড়ায় রুমা উপজেলায় অবস্থিত। রুমা থেকে তাজিংডং (বিজয়) চূড়ার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং কেওক্রাডং পাহাড়ের দূরত্ব রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
মিরিঞ্জা: বান্দরবানের আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গুলোর মধ্যে একটি মিরিঞ্জা। বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় অবস্থিত মিরিঞ্জা পর্যটন স্পট। লামা-আলীকদম সড়কের ১৬ কিলোমিটার পয়েন্টে মিরিঞ্জা পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ট হতে মিরিঞ্জা পর্যটনের উচ্চতা প্রায় ১৫০০ফুট। এটি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় স্থান।
উপবন: প্রকৃতির অপরুপ দান উপবন পর্যটন স্পট, এখানে বনের মাঝে লেক। বান্দরবান জেলার নাক্ষংছড়ি উপজেলায় উপবন অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে উপবনে রয়েছে বিশাল একটি লেক। আর লেকের উপর আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু। মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু দুটির চেয়ে লম্বা উপবন ঝুলন্ত সেতু।