বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একই হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বিয়ে করলেন নারী চিকিৎসক

প্রকাশিত : ০৪:৫০ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার

একই-হাসপাতালের-পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে-বিয়ে-করলেন-নারী-চিকিৎসক

একই-হাসপাতালের-পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে-বিয়ে-করলেন-নারী-চিকিৎসক

সমাজের রীতি-নীতির শৃঙ্খল বড়ই কঠিন। সেই শৃঙ্খল ভাঙতে সবার সাধ্য হয় না। কিন্তু প্রেম ও ভালোবাসার কাছে সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তেমনি হাসপাতালের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে বিয়ে করে সমাজের শৃঙ্খল প্রাচীর ভেঙেছেন একই হাসপাতালে কর্মরত একজন নারী চিকিৎসক।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ব্যতিক্রমী এ বিয়ের ঘটনাটি ঘটেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, এমবিবিএস পাস করার পর পেশাগত দায়িত্ব পালনে একটি হাসপাতালে যুক্ত হয়েছিলেন এক নারী চিকিৎসক। ঐ এমবিবিএস চিকিৎসকের নাম কিশওয়ার সাহিবা। তার স্বামী ও হাসপাতালের একই হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী নাম শাহজাদ। তারা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ওকারা জেলার দিপালপুর শহরের বাসিন্দা।

মূলত কিশওয়ারই পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাহজাদকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিয়ের পর একটি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অনন্য প্রেমের গল্প ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় । ‘মেরা পাকিস্তান’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে পাকিস্তানি এ দম্পতি তাদের প্রেমের গল্প জানিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানের যে হাসপাতালে কিশওয়ার সাহিবা চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন ঐ একই হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে আসতেন শাহজাদ। অনেক সময় চা-নাস্তাও দিয়ে যেতেন। সেখানে দেখেই শাহজাদকে পছন্দ হয় চিকিৎসক কিশওয়ার সাহিবার।

একপর্যায়ে শাহজাদকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন তিনি। এরপর একদিন বিয়ে করেন দু’জন। নিজের প্রেমের গল্প পাকিস্তানের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ইউটিউবার হরিশ ভাট্টির কাছে প্রকাশ করেছেন কিশওয়ার-শাহজাদ। তাদের ভালোবাসার গল্প শুনে আনন্দে ভাসছেন অনলাইন ব্যবহারকারীরা।

নিজেদের গল্প বলার সময় স্বামী শাহজাদ স্পষ্ট করে জানান, এমনটা যে হতে পারে তিনি ভাবতেই পারেননি! ভালোবাসার প্রথম প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন কিশওয়ারই। যখন হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে এসেছিলেন শাহজা, তখন তার মোবাইল নম্বরটা চেয়ে নেন কিশওয়ার। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে দু’জনের কথাবার্তা চলতে থাকে। একদিন শাহজাদ একটি ‘স্ট্যাটাস মেসেজ’ দিয়েছিলেন হোয়াটসঅ্যাপে। সেই দেখে এক মুহূর্তেই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেন কিশওয়ার। শাহজাদকে নিজের কর্মস্থল হাসপাতালে ডেকে পাঠান তিনি। তারপর সোজাসুজি জানিয়ে দেন ভালোবাসার কথা।

অবশ্য আচমকা এ ধরনের কথা শুনে চমকে গিয়েছিলেন শাহজাদ। জ্বর এসে গিয়েছিল তার। সেই জ্বরের চিকিৎসা হয়েছিল এবং স্বাভাবিকভাবে সেটি করেছিলেন কিশওয়ারই। আর এরপরই দু’জন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন।

কেন শাহজাদকে ভালো লেগেছিল কিশওয়ারের? উত্তরে এ নারী চিকিৎসক জানান, একবারের জন্যও শাহজাদকে দেখে তার ‘চা-ওয়ালা’ মনে হয়নি। সাদাসিধে মানুষটাকেই ভালো লেগে গিয়েছিল।

অবশ্য কিশওয়ার মেনে নিলেও শাহজাদকে তার স্বামী হিসেবে মানতে পারেননি কিশওয়ারের সহকর্মীরা। তাদের কটুক্তির জন্য ঐ হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কিশওয়ার। এখন তার ইচ্ছা, ঐ এলাকাতেই একেবারে নিজের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলবেন। প্রত্যাশিতভাবেই পাশে দাঁড়িয়েছেন শাহজাদ।

তবে সহকর্মীরা না মানলেও স্বামী শাহজাদের ব্যক্তিত্বের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন কিশওয়ার। ঐ নারী চিকিৎসক বলেন, তিনি আগে শাহজাদকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন কারণ তার সঙ্গে দুর্দান্ত বিবাহের সম্ভাবনা তিনি হারাতে চান না। 

এমনকি নিজের জীবনের সব সিদ্ধান্ত তিনি মাত্র একদিনে নিয়েছিলেন বলেও জানান কিশওয়ার।

অন্যদিকে শাহজাদ জানান, তিনি তিনজন চিকিৎসকের অফিস কক্ষ পরিষ্কার করতেন এবং চা পরিবেশন করতেন। একদিন কিশওয়ার তার ফোন নম্বর চেয়ে নেন, আর এর পরে তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।

এদিকে, ইউটিউবে তাদের হৃদয়গ্রাহী প্রেমের গল্প ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পুলকিত করেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, অসাধারণ প্রেমের গল্প। সুন্দর দম্পতি। অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, সুন্দর দম্পতি।