সরকারের প্রতি ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থন, হতাশ বিএনপি
প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার
সরকারের-প্রতি-ভারতের-অকুণ্ঠ-সমর্থন-হতাশ-বিএনপি
বিএনপি নেতারা আশা করেছিলেন এবার প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ভিন্ন কিছু ঘটবে। নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলাদেশের বেশকিছু ব্যাপারে নেতিবাচক বার্তা দেবে। কিন্তু সেসব কিছুই ঘটেনি। বরং ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, সে কথাও বলা হয়েছে দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ভারত। ভারত বাংলাদেশকে বিনা শুল্কে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। বিএনপি নেতারা আশা করেছিলেন এবার ভারত সফরে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়, সেটি নিয়ে কথাবার্তা হবে। বিএনপি এ নিয়ে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে আগে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি।
তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গেও একাধিক বৈঠকে এ বিষয়টি (জাতীয় নির্বাচন) নিয়ে কথা বলেছিল বিএনপি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরে এটি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরে সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিষয়টি ভারত তুলবে বলেও আশা করেছিলেন বিএনপি নেতারা।
বিশেষ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বের চন্দ্র রায় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই বাংলাদেশে হিন্দু নিপীড়ন হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগের নেতারা নির্যাতন করছেন- এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। এ বিষয়গুলো যেন ভারতের কাছে যায় এবং ভারত যেন এ নিয়ে তাদের আপত্তির কথা প্রকাশ করে সেটিও বিএনপির নেতারা আশা করেছিলেন। কিন্তু এ সফরে এমন কোনো আলোচনাই হয়নি। বরং দুই দেশের বাণিজ্য এবং বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। এটিও বিএনপির হতাশার একটি কারণ।
বিএনপির নেতারা আশা করেছিলেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে জাতিসংঘ কথা বলছে; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কথা বলছে এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও কথা বলছে; ভারতও হয়তো বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কিছু পরামর্শ দেবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে মানবাধিকার বিষয়টি আলোচনা সূচিতেও ছিল না।
বিএনপির নেতারা সবচেয়ে বড় যেটি আশা করেছিলেন, এবারের সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে কম গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং এ সফরের মধ্য দিয়ে ভারত বুঝিয়ে দেবে তারা বাংলাদেশের একক কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নয়। কিন্তু এমনটিও হয়নি। ঘটেছে তার উল্টো।
সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভূতপূর্ব রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এবং গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার নেতৃত্বের প্রতি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কারণেই বাংলাদেশ থেকে যে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নির্মূল হয়েছে এ বিষয়টি ভারতের বিভিন্ন ফোরামে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার কারণেই ভারত অনেক কিছু পেয়েছে।
এবারের সফরে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক ছিল বাংলাদেশকে আলাদা একটা মর্যাদার আসনে আসীন করেছে প্রতিবেশী দেশটি। আর এ কারণেই বিএনপির মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে।
বিএনপি মনে করে আগামী নির্বাচনের আগে সরকারকে একটি আন্তর্জাতিক চাপ দিতে হবে। আর সে চাপ সম্ভব হবে তখনই যখন ভারত বাংলাদেশকে চাপ দেবে। কিন্তু চাপ দূরে থাক, ভারত বর্তমান সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে দিয়েছে। আর এটিই এখন বিএনপিকে হতাশ করেছে।