গাড়িকে ঘর বানিয়ে ভ্রমণ করছেন পাঁচ সদস্যের এই পরিবার
প্রকাশিত : ০৪:৫৫ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
গাড়িকে-ঘর-বানিয়ে-ভ্রমণ-করছেন-পাঁচ-সদস্যের-এই-পরিবার
তারা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মলি এবং জ্যারেন গার্সিয়া দম্পতি। ২০১৯ সাল থেকে গাড়িই তাদের বাড়ি।
এই জীবনকে তারা স্বাধীন মনে করছেন। ৩০ বছর বয়সী জ্যারেন গার্সিয়া বলেন, ‘আমাদের জন্য কোনটা স্বাধীনতা তা আমরা খুঁজে পেয়েছি। প্রত্যেকের কাছেই তার স্বাধীনতার অর্থ আছে। আর স্বাধীনতা হিসেবে আমরা যা বেছে নিয়েছি, তার জন্য আমরা খুশি।’
এরইমধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি রাজ্য ভ্রমণ করেছেন, ব্যবহার করেছেন ৫টি গাড়ি। এখন তারা যে গাড়িতে থাকছেন সেটি ৪৪ ফুটের একটি মোটরহোম।
যে কারণে এই সিদ্ধান্ত:
বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় গাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছেন জ্যারেন গার্সিয়া তখন একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বিভাগে কাজ করতেন। কাজের সুবাদে তাকে ভ্রমণ করতে হতো। পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে সময় কাটানো ও নিজের কাজের সময়-সূচি নিজে ঠিক করার জন্য তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
২৯ বছর বয়সী মলি বলেছেন, আমি বাচ্চাদের সঙ্গে বাড়িতে থাকতাম আর দেখা যেত জ্যারেন তার কাজের জন্য রাজ্যের বাইরে থাকতো। দেখা যেত মাসের মধ্যে মাত্র কয়েকটা দিনই সে বাড়িতে থাকত। এভাবে কয়েকটা মাস যাওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, না, এভাবে আমি আর বাড়িতে থাকছি না।
এরপরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন জ্যারেন যেখানে থাকবে তিনিও সেখানেই থাকবেন, সেটা যদি গাড়িতে হয় তো গাড়িতেই।
মলি ও জ্যারেনের তিন সন্তান- লিলি (১৩), জ্যাক্সটন (৯) ও উইলো (৫)। মলি আপাতত তাদের সন্তানদের লেখাপড়া করান এবং ব্লগ ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্য কনটেন্ট তৈরি করে থাকেন। তারা যে গাড়িতে আছেন ঐ গাড়ি চালানোর দায়িত্ব জ্যারেনের। তিনি তার আগের চাকরি ছেড়ে এখন ইন্ডেপেন্ডেন্ট ইন্সুরেন্স অ্যাডজাস্টার হিসেবে কাজ নিয়োজিত। জীবিকার জন্য পাশাপাশি আরো কিছু কাজও করেন তারা।
তাদের সন্তানেরা দ্রুত এই নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। তাদের এটা ভালোও লাগছে। তারা এখন বাড়ি ফিরতে চায় না, স্কুলেও যেতে চায় না। এভাবে ঘুরতেই তাদের ভালো লাগছে।
জ্যারেন ও মলির হিসাবে তারা যখন আগে স্বাভাবিক ধারায় একটি বাড়িতে থাকতেন মাসে তাদের ৩ হাজার ডলার করে খরচ হতো। এখন এই মোটরহোমের জীবনে তাদের খরচ অনেক কমে এসেছে।
যখন তারা প্রথম এভাবে থাকা শুরু করেন, তখন তারা পুরো মাস ধরে একটি আরভি (রিক্রিয়েশনাল ভেহিকল) পার্কে ছিলেন, এর জন্য মাসিক খরচ ছিল ৬৫০ ডলার। বিদ্যুৎ ও পানির জন্য তাদের দিতে হয় ১৩০ ডলার।
খাবার খরচসহ সব মিলিয়ে মলির আনুমানিক হিসাব মাসে অন্তত ১ হাজার ডলার খরচ কমেছে তাদের।
জ্যারেন বলেন, ৫ হাজার ডলারেও আরভি কেনা যায়, আবার ৫ লাখেও কেনা যায়, আপনি কেমন মানুষ, তার ওপর নির্ভর করে আপনার কেমন আরভি প্রয়োজন। এটা আসলে একটা বাড়ি কেনার মতোই। সব কিছু মিলিয়ে আমি এটা বলব না যে, এর খরচ একেবারে কম, কারণ এখন জ্বালানির খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
গার্সিয়ারা তাদের গন্তব্যের জন্য এখন বিভিন্ন ন্যাশনাল পার্ক, জাদুঘর, চিড়িয়াখানা এবং লাইব্রেরিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তাদের প্রিয় গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে উটাহ এবং মন্টানার ন্যাশনাল পার্ক।
খরচ কীভাবে বাজেটের মধ্যে রাখা যায় সে বিষয়ে মলি গার্সিয়া বলেন, অনেক উপায় রয়েছে। চাইলেই এর খরচ কমিয়ে আনা যায়। মানুষজন থাকে না এমন কোথাও গিয়ে কিছুদিন গাড়িতে থাকতে পারেন। এছাড়া অনেক ট্রেইল সদস্যপদ দেয়। আর সদস্যদের জন্য ক্যাম্পগ্রাউন্ড এবং আরভি পার্ক থাকে। আপনি যদি আগে কোথাও বেশি খরচ করে ফেলে থাকেন, তবে বিনামূল্যে সেখানে দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় থাকতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা মানুষকে আসলে খরচের ভয় দেখাতে চান না। এই জীবনে আপনার অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হবে, আপনি অনেক ভ্রমণ করতে পারবেন এবং নিজের ইচ্ছে মতো সময় কাটাতে পারবেন।
জ্যারেন গার্সিয়া বলেন, আমরা সবাইকে বলতে চাই যে আপনি যদি ইচ্ছে করেন তবে আপনি অবশ্যই এটা করতে পারেন। এর জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হলো আপনি নিজে যেটা তৈরি করেছেন সেটাই। আপনি চাইলেই এ বাধা অতিক্রম করতে পারেন।