চেচুয়া বিলে লাল শাপলার হাতছানি
প্রকাশিত : ০৩:৫৫ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার
চেচুয়া-বিলে লাল-শাপলার-হাতছানি
প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তীর্ণ এ বিলটি। লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ দেখা মেলে সাদা ও বেগুনি শাপলা। সঙ্গে ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভা, এখানকার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। প্রকৃতির এই সম্মোহনী রূপ যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মনে দোলা দিয়ে যায়। শিশির ভেজা রোদমাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
তবে ডিঙি নৌকার আধিক্যে বিলের সৌন্দর্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বেড়াতে আসা পর্যটকরা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ার কারণেও নষ্ট হচ্ছিলো বিলের সৌন্দর্য। সুখবর হচ্ছে, সৌন্দর্য রক্ষায় স্থানীয়ভাবে এই বিলে ফুল তুলে বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘুরতে আসা মানুষকে এলাকাবাসী সহযোগিতা করছেন। দর্শনার্থীদের নিয়মানুবর্তিতায় এভাবেই বিলটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
তবে এ বিলটি দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে একটি গুজবকে কেন্দ্র করে। একদিন সকাল হতেই কিছু লোক দেখতে পান সেখানে থাকা জমাটবাঁধা কচু হঠাৎ সরে গিয়ে অনেকটা জায়গা ফাঁকা হয়েছে। এটাকে অলৌকিক ঘটনা বলে প্রচার করা হয়। কিছু মানুষ এখানে গোসল করে এর পানি খেয়ে রোগ থেকে মুক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন। পরে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সারাদেশের হাজার হাজার মানুষ কাঁদামাখা পানিতে গোসল, গড়াগড়ি ও কাদাযুক্ত পানি সংগ্রহ করতে এখানে ভিড় করেন। তবে গত দুইবছর থেকে গুজবে নয়, বিলের সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
সম্প্রতি ভ্রমণপিয়াসী মানুষের মেলা বসেছে সেখানে। বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হাজার মানুষের ঢল নামে প্রতিদিন। তবে চেচুয়া বিলের শাপলার স্পর্শ পেতে ভ্রমনপিয়াসীদের একটু বেগ পেতে হয়। পায়ে হেঁটে যেতে হয় কিছুদূর পথ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।
যেভাবে যাবেন: বাংলাদেশের যেকোন জায়গা থেকে বাসযোগে ত্রিশাল আসতে হবে। প্রথমে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বালিপাড়া রোডে ইজিবাইকে করে ঠাকুরবাড়ি মোড়ে এসে নামতে হবে। ভাড়া ১০ টাকা। এরপর চেচুয়া বিল পর্যন্ত হেঁটে যেতে হবে। সাত/আট মিনিটের পথ পেরুলেই দেখা মিলবে এই বিলের। এরপর জমির আল বেয়ে বিলের ধারে গিয়ে বিল ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে ছোট ছোট বেশ কটি ডিঙি নৌকা।
চেচুয়া বিল ঘুরতে এসেছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে রাসেল পারভেজ বলেন, ‘চেচুয়া বিলের এই অপার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। গতবার আসা হয়নি তাই এবার আর মিস করিনি। তবে এই আনন্দের পাশাপাশি কিছু হতাশার দিকও আছে। এখানে আসার রাস্তাটা মেরামত করা জরুরি। অনেকেই দেখছি ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এটা বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসনের জোর ভূমিকা রাখতে হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এখানে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই শুনেছি এই বিলের গুজব রহস্যের কথা। কিন্তু এই বিল ২০২১ সাল থেকে পরিচিতি পেয়েছে লাল শাপলার অপার সৌন্দর্যের জন্য। চেচুয়া বিলের সৌন্দর্য রক্ষায় এবং দর্শনার্থীদের প্রকৃতি উপভোগে সব ধরণের সহযোগিতা ও পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
প্রকৃতির সান্নিধ্যে আপনিও কাটিয়ে আসতে পারেন একটি দিন।