বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের ৫১তম শাহাদতবার্ষিকী

প্রকাশিত : ০২:১০ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ সোমবার

বীরশ্রেষ্ঠ-শহিদ-ল্যান্স-নায়েক-নূর-মোহাম্মদের-৫১তম-শাহাদতবার্ষিকী

বীরশ্রেষ্ঠ-শহিদ-ল্যান্স-নায়েক-নূর-মোহাম্মদের-৫১তম-শাহাদতবার্ষিকী

আজ ৫ সেপ্টেম্বর (সোমবার)। বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫১তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে যশোরের গোয়ালহাটি গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ, দলীয় সঙ্গীদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হন তিনি।

যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুরে সমাহিত করা হয়েছে ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূষিত করা হয়েছে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার নড়াইল জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার জীবনভিত্তিক আলোচনা এবং রূহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জিন্নাতুন নেছা। বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান নূর মোহাম্মদ।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য মহিষখোলা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ নূর মোহাম্মদ নগর করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী নূর মোহাম্মদ নগরের উদ্বোধন করেন। এরপরই সেখানে লাগে উন্নয়নের ছোঁয়া, বদলে যায় নূর মোহাম্মদ নগর। তার স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’, স্মৃতিস্তম্ভ এবং স্কুল ও কলেজ।

এছাড়া নড়াইল শহরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়াম এবং নড়াইল ও যশোর শহরে তার সন্তানদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর নূর মোহাম্মদ শেখের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। নূর মোহাম্মদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে নড়াইল এবং যশোর শহরে বসবাস করেন।

১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর) যোগদান করেন নূর মোহাম্মদ শেখ। যা বর্তমানে ‘বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (বিজিবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই যশোর সেক্টরে বদলি হন তিনি। পরবর্তীতে ল্যান্স নায়েকে পদোন্নতি পান।

১৯৭১ সালে যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেজর এস এ মঞ্জুর। যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেন নূর মোহাম্মদ। ৫ সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি গ্রামে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ, সহযোদ্ধাদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হন তিনি।

নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৫১তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ নূর মোহাম্মদ নগরে কোরআনখানি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সশস্ত্র সালাম, দোয়া মাহফিল, শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতা এবং ৩০০ অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জীবনভিত্তিক আলোচনা এবং রূহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বীরশ্রেষ্ঠ শোহিদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদের নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও কলেজ জাতীয় করণসহ তার স্মৃতিস্তম্ভের চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও দর্শনার্থীদের বসার জায়গা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।