সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটক বাড়ছে এশিয়ার সব থেকে বড় বস্তিতে

প্রকাশিত : ০৫:৫৫ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ রোববার

পর্যটক-বাড়ছে-এশিয়ার-সব-থেকে-বড়-বস্তিতে

পর্যটক-বাড়ছে-এশিয়ার-সব-থেকে-বড়-বস্তিতে

এশিয়ার সব থেকে বড় বস্তির সরু অলিগলিতে অনেক পর্যটক ঘুরে বেড়ান। এক পর্যটক লিখেছেন, দারুণ একটা দিন কাটালাম। ওখানে সবাই খুব বন্ধু ভাবাপন্ন। কেউ ভিক্ষা চাইছিলও না। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘বস্তি পর্যটন’ বা ‘দারিদ্র পর্যটন’।

মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিকে বলা হয় এশিয়ার সবচাইতে বড় বস্তি। ভারতের ভ্রমণ বিষয়ক বহু ওয়েবসাইটে এই বস্তিকে খুব চমকপ্রদ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা বলে বিদেশীদের কাছে তুলে ধরা হয়। মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিতে ভ্রমণ শেষে ওয়েবসাইটে সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লিখেছেন এক পর্যটক।

ধারাভির অবস্থান মুম্বাই শহরের একেবারে কেন্দ্রে। আনুমানিক দশ লাখ লোকের বাস সেখানে। আর সব বস্তির মতো সরু গলি, অন্ধকার খুপরি ঘর, খোলা নোংরা ড্রেন আর দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেট সেখানকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। অধিবাসীদের অনেকেই চামড়া সামগ্রী তৈরির ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। যেগুলো উন্নত রফতানি সামগ্রী। এছাড়া এমব্রয়ডারির ফ্যাক্টরি, প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদন আর মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকে। মুম্বাই শহরের চাকা এক অর্থে এই বস্তির মানুষেরাই টিকিয়ে রেখেছেন।

যেভাবে এর শুরু
ভারতে এই বিতর্কিত পর্যটন ব্যবসায় বেশ ভালো অর্থ উপার্জন হচ্ছে। পর্যটকরা ভারতে তাদের অবকাশ যাপনের অংশ হিসেবে খুব কাছে থেকে দারিদ্র এবং দরিদ্র মানুষের জীবন দেখতে যাচ্ছেন। আপনি হয়ত ভাববেন- ভারতে বেড়াতে গেলে বেশিরভাগ মানুষ তাদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য হিসেবে বিখ্যাত তাজমহলের কথাই বলবে। কিন্তু ধারাভি বস্তির অভিজ্ঞতা এখন সবচাইতে জনপ্রিয় পর্যটন অভিজ্ঞতা হিসেবে প্রচার পাচ্ছে। জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ওয়েবসাইট ট্রিপঅ্যাডভাইজারে এটি পর্যটকের সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় পুরস্কারও পেয়েছে।
মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিকে বলা হয় এশিয়ার সবচাইতে বড় বস্তি।

কৃষ্ণা পূজারী ২০০৫ সালে রিয়ালিটি টুরস অ্যান্ড ট্রাভেল নামে একটি কোম্পানি খুলেছিলেন। এই কোম্পানিই ভারতে এমন বিতর্কিত পর্যটনের প্রবর্তনের সঙ্গে জড়িত।  এখানে বেশিরভাগ পর্যটক আসেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর অস্ট্রেলিয়া থেকে। কৃষ্ণা পূজারী জানিয়েছেন, যখন তার কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এক ব্রিটিশ বন্ধু ক্রাইস্ট ওয়ে এরকম একটা ট্যুর চালু করার কথা বললেন তিনি খুব বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। বস্তি দেখতে চাইবে কেন কেউ? তারপর তিনি বুঝলেন- আসলে সেখানে অনেক কিছু দেখার এবং শেখার আছে।

মেলিসা নিসবেট ২০১৬ সালে ধারাভিতে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ছয় ঘণ্টা ধরে ঘুরেছেন বস্তির আনাচে কানাচে। তিনি বলছেন, ‘আসলে আমরা সেই ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকে বস্তি ঘুরে দেখছি। শুরুতে বিষয়টা ছিল পুরোটাই বিনোদনের জন্য। কিন্তু তারপর সেটি সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে মিশে গেছে। আমি যে কারণে গিয়েছিলাম আমার মনে অন্য পর্যটকেরাও একই কারণে সেখানে গিয়েছেন। সেটা হল জীবনের বাস্তবতা অনুধাবন করতে চাওয়া। এমনভাবে বস্তিকে তুলে ধরা হয়েছে যে সেখানে গেলে কোন ঝামেলা হবে না। দারিদ্রকে উপেক্ষা করা হয়েছে, যেন এটাই স্বাভাবিক বাস্তবতা। বরং দারিদ্রকে রোমান্টিসাইজ করা হয়েছে।’

বস্তিতে খাওয়ার অভিজ্ঞতাও পেতে পারেন আপনি। সেরকম অভিজ্ঞতা দেবার জন্যে পর্যটন কোম্পানি গড়ে উঠেছে। সেটিকে তারা নাম দিয়েছেন ‘সাংস্কৃতিক আদান প্রদান’। ‘ইনসাইড মুম্বাই’ সেরকম একটি কোম্পানি। তবে পশ্চিমারা যে এই প্রথম দারিদ্র দেখতে ভ্রমণে যাচ্ছেন তা নয়। এর আগে ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার বস্তিতে এমন পর্যটন চালু হয়েছে।

সেখানকার অধিবাসীরাও বিদেশী এসব পর্যটকদের দিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজেদের দৈনন্দিন জীবন চালিয়ে যেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন বেশিরভাগ পর্যটক সেখানে যাচ্ছেন দারিদ্র সম্পর্কে উদ্বেগ নিয়ে। কিন্তু সেখানে সময় কাটিয়ে ফিরছেন এমন মনোভাব নিয়ে যেন সেখানে কোন সমস্যাই নেই।

লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফেবিয়ান ফ্রেনযেল বলছেন, ‘এধরনের ভ্রমণ হয়ত দারিদ্র ও বস্তির মানুষের জটিল সমস্যাগুলোর দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ পেতে সাহায্য করবে। ভারত যেমন চাঁদে রকেট পাঠাচ্ছে কিন্তু আবার একই সাথে সেখানে বিশাল জনগোষ্ঠী চরম দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। ভারতের রাজনীতি কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয় এবং তার ফলে যে অবিচারের জন্ম হয়, এমন পর্যটন হয়ত সেটির দিকে কিছুটা দৃষ্টিপাত করবে।’

সূত্র: বিবিসি