দেখে আসুন দেশের একমাত্র ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী’
প্রকাশিত : ০৫:৫৫ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার
দেখে-আসুন-দেশের-একমাত্র-ডিজিটাল-আইল্যান্ড-মহেশখালী
দেশের একমাত্র ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী’। এখানে আসলে পর্যটকদের আনন্দের খোরাক জোগায় মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, হাতে বোনা বিচিত্র কাপড়ের মার্কেট, বৌদ্ধ মন্দির এবং প্যাগোডা।
উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের ঠাকুরতলা গ্রামের মৈনাক পর্বতের চূড়ায় মহাদেবের শিব লিঙ্গ ও সনাতনী সম্প্রদায়ের মা অষ্টভূজা আদিনাথ মন্দিরে অবস্থিত। সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে এই মন্দিরের রয়েছে আধ্যাত্মিক গুরুত্ব। হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাদেবের নামানুসারে মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে আদিনাথ। আবার আদিনাথের অন্য নাম মহেশ, যা থেকে মহেশখালি নামের সৃষ্টি।
মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৮৫.৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। বর্তমানে এই মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতরে রাখাইন বৌদ্ধ বিহার আছে। এর কাছাকাছি রয়েছে মসজিদ। এজন্য অনেকে মন্দিরটিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক হিসাবে আখ্যায়িত করেন। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের শুক্লা তিথিতে বসে শিব চতুর্দশী পূজা ও মেলা। এ উপলক্ষে মাসব্যাপী মেলায় পুতুল নাচ, গান, যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়। তখন ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তাই আদিনাথ মন্দির ও রাখাইন পল্লীতে পর্যটকের আনাগোনা থাকে সারা বছর।
আদিনাথ মন্দির যাওয়া যায় যেভাবে:
কক্সবাজার শহর থেকে যেতে হবে ৬ নং জেটি ঘাট হয়ে। শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে থেকে অটোরিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে বাঁকখালী নদীর ৬ নং জেটি ঘাটে এলে মিলবে স্পীড বোট অথবা নৌকা। ৬ নং জেটি ঘাট থেকে জনপ্রতি ১১০ টাকা ভাড়া স্পিডবোটে আর কাঠের নৌকায় জনপ্রতি ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। স্পীড বোটে করে মহেশখালী আদিনাথ জেটিতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট।
মহেশখালী পৌঁছে যা খাওয়া যায়:
মহেশখালী জেটিতে পৌঁছানো মাত্রই ঘাটে পাওয়া যায় মহেশখালীর বিখ্যাত মিষ্টি পান। বিক্রেতারা ঘাটে টংয়ের দোকানে বসে বিক্রি করেন এসব পান। ঘাট থেকে রিকশা বা টমটমে যাবেন গোরগঘাটা বাজারে। সেখানে গেলেই পাবেন রাখাইন পল্লী বৌদ্ধ মন্দির, বিহার প্যাগোডা। বাজারে রয়েছে মহেশখালীর বিশুদ্ধ শুঁটকির দোকান। বিভিন্ন ধরনের খাবার হোটেল রয়েছে। চাইলে হোটেলে বসে দামদর করে খেতে পারেন। গোরকঘাটা বাজার থেকে আবার রিকশা, টমটম বা সিএনজি নিয়ে সোজা চলে যাবেন আদিনাথ মন্দির। গাড়ি ভাড়া দরদাম করে নেয়া ভালো। মন্দিরের সামনে পাবেন তরতাজা ডাব, কলা ও লোকাল খাবার। তাছাড়া আদিনাথ মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় দেখবেন রাখাইন নারীরা হাতে বোনা কাপড়ের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন। পছন্দের বিছানার চাদর ও কাপড় অতি স্বল্প দামে কিনতে পাওয়া যায়।
থাকার জায়গা
মহেশখালীতে পর্যটকদের জন্য তেমন কোনো আবাসন গড়ে উঠেনি। তাই মহেশখালিতে রাত্রি যাপন নিরাপদ নয়। রাতে কক্সবাজার কিংবা সুবিধাজনক স্থানে ফিরে যাওয়া যায়। তাই সাধারণত মহেশখালীতে পর্যটকেরা রাত্রি যাপন করে না। যেকোনো সময় কক্সবাজার ফিরে আসা যায়।
মহেশখালী গিয়ে আদিনাথ মন্দির ছাড়া আরো যা দেখবেন:
ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে বৌদ্ধ বিহার, পরিপাটি রাখাইন পল্লী, স্বর্ণমন্দির, ঝাউবন। আরো আছে পানের বরজ, চিংড়িরঘের,শুঁটকিপল্লী ও লবণের মাঠ। এছাড়া এই পাহাড়ি দ্বীপের চারপাশ ঘুরে দেখতে কে না চায়। ভোরে কক্সবাজার শহর থেকে রওনা দিলে চাইলে একদিনেও এসব স্থান ঘুরে দেখা যায়।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরের সহায়তা নিতে পারেন পর্যটকেরা। জনপ্রতি ৫০০ টাকা দিলে সকালের নাস্তাসহ সাগরকন্যা মহেশখালীর সৌন্দর্য উপভোগ করে দিনে দিনে কক্সবাজার ফিরে আসা যায়। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) প্রধান উপদেষ্টা মফিজুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারের খুব কাছাকাছি হওয়ায় স্বল্প খরচে কম সময়ে পর্যটকরা ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী ঘুরে আসতে পারেন। এ কারণে দিন দিন মহেশখালীতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। এ দিকে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান বলেন,কক্সবাজারের ন্যয় মহেশখালীতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তায় সক্রিয় রয়েছে।